G-VV5KW25M6F
Take a fresh look at your lifestyle.

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসতে পারে কাল

0
 
ঢাকা প্রতিনিধি: স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান উঠতে পারে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। আজ বুধবার ভাসমান বড় ক্রেনে স্প্যানটি উঠিয়ে যেখানে স্থাপন করা হবে, সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে সেখানে স্প্যানটি রাখা হবে। আগামীকাল সুবিধাজনক সময়ে স্প্যানটি ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটিতে (পিলার) স্থাপন করা হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সর্বশেষ স্প্যানটি স্থাপনের মাধ্যমে পদ্মার দুই পাড় মাওয়া ও জাজিরা যুক্ত হয়ে যাবে। এরপর সড়ক ও রেলের স্ল্যাব বসানো সম্পন্ন হলে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সরকার আগামী বছর ডিসেম্বরে সেতুটি চালু করার ঘোষণা দিয়েছে।
জানতে চাইলে সেতু বিভাগের সচিব মো. বেলায়েত হোসেন আজ দুপুর ১২টার দিকে বলেন, সেতুর শেষ স্প্যান বসানোর সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল স্প্যানটি বসতে পারে। তবে এটি পুরোপুরি কারিগরি বিষয় এবং তা দেখভাল করছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও প্রকৌশলীরা। তিনি আরও বলেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে সবকিছুতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে।
 
পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঘন কুয়াশার কারণে সর্বশেষ স্প্যান খুঁটিতে বসানোর কাজটা কিছুটা কঠিন হতে পারে। এ জন্য আগেই খুঁটির কাছে নিয়ে রাখা হচ্ছে, যাতে আগামীকাল সহজেই স্প্যানটি তোলা যায়। পদ্মা সেতুর সর্বশেষ, অর্থাৎ ৪১ নম্বর স্প্যানটি বসবে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে। মাওয়ার কুমারভোগের নির্মাণমাঠে যেখানে স্প্যান প্রস্তুত করা হয়, সেখান থেকে এটি বসানোর খুঁটি খুব বেশি দূরে নয়। এ জন্য কুয়াশা থাকলেও বড় কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
করোনা পরিস্থিতির কারণে কর্মসূচি বাতিল
শেষ স্প্যান বসানোর ঐতিহাসিক মুহূর্তটি উদ্‌যাপনের বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছিল সেতু বিভাগ। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে সব কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। আগামীকাল অনেকটাই অনাড়ম্বরভাবেই স্প্যান তোলার কাজ সম্পন্ন হবে।
আগামী শুক্রবার সেতু ভবনে প্রকল্পের অগ্রগতিসংক্রান্ত পর্যালোচনা সভা করবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেখানেই তিনি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন। এর আগে স্প্যান তোলার মুহূর্তটি সেতু ভবন থেকে ভিডিও কলের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করার কথা ছিল সেতুমন্ত্রীর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় শেষ মুহূর্তে সেটি বাতিল করা হয়েছে বলে সেতু বিভাগ সূত্র জানায়।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, স্প্যান তোলার বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প এলাকায় বেশি মানুষের উপস্থিতি চাইছে না বিদেশি পরামর্শকেরা। পরামর্শক দলের জ্যেষ্ঠ সদস্য ও ঠিকাদারদের শীর্ষ প্রকৌশলীরা বেশির ভাগই বয়োজ্যেষ্ঠ। করোনাকালে তাঁরা প্রকল্প এলাকায় থাকছেন অনেকটা লকডাউনের মধ্যে। প্রকল্প এলাকায় যেসব শ্রমিক কাজ করছেন, তাঁদের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কড়াকড়ি আছে বাইরে থেকেও কাউকে প্রবেশেরও। এ জন্য স্প্যান তোলাকে উপলক্ষ করে সব ধরনের জমায়েত ও উপস্থিতি এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন পরামর্শকেরা।
পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি খুঁটির ওপর বসেছিল ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। বাকি ৪০টি স্প্যান বসাতে তিন বছর দুই মাস লাগল। অবশ্য গত দুই মাসে ১০টি স্প্যান বসেছে। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত সূত্র বলছে, আগামী বছর ডিসেম্বরে সেতু চালু করতে হলে চলতি মাসের মধ্যে সব স্প্যান বসাতেই হতো। বলা যায়, শেষ স্পেন বসানোর মাধ্যমে পরিকল্পনামতোই কাজ এগোচ্ছে।
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ও বন্যার অত্যধিক স্রোত পদ্মা সেতুর কাজে কিছুটা গতি কমিয়ে দেয়। করোনার ক্ষতি কমাতে প্রকল্প এলাকা পুরোপুরি লকডাউন করা হয়। অর্থাৎ শ্রমিক ও প্রকৌশলী যাঁরা কাজে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের প্রকল্প এলাকা থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। নদীর দুই পাড়ে দুটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। আর বন্যার সময় বসাতে না পারলেও বাকি সব স্প্যান প্রস্তুত রাখার কাজ করা হয়। করোনা ও বন্যা পরিস্থিতির ধকল কাটিয়ে ১১ অক্টোবর ৩২তম স্প্যান বসানোর পর অনুকূল আবহাওয়া পাওয়া গেছে। কারিগরি কোনো জটিলতাও তৈরি হয়নি। ফলে, টানা বাকি ১০টি স্প্যান বসানো সম্ভব হয়েছে।
পদ্মার মূল সেতু হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া এবং শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে।
মাদারীপুরের শিবচরে পড়েছে সেতুর টোলপ্লাজা, সংযোগ সড়কসহ আরও স্থাপনা। ফলে, পদ্মা সেতুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে তিন জেলা। সেতুর নদীর অংশের দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ১৫০ মিটার দীর্ঘ প্রতিটি স্প্যান দিয়ে সেতুটি জোড়া লাগানো হচ্ছে। ৪২টি খুঁটির ওপর ৪১টি স্প্যান বসেছে। অবশ্য দুই পাড়ে আরও প্রায় চার কিলোমিটার সেতু আগেই নির্মাণ হয়ে গেছে। এটাকে বলা হয় ভায়াডাক্ট। এর মধ্যে স্টিলের কোনো স্প্যান নেই।
পদ্মা সেতু দ্বিতলবিশিষ্ট। স্টিলের স্প্যানের ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। এই পথ তৈরির জন্য কংক্রিটের স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। এ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে পিচঢালাই করা হবে। পুরো কাজ শেষ হলে যানবাহন চলাচলের পথটি হবে ২২ মিটার চওড়া, চার লেনের। মাঝখানে থাকবে বিভাজক। স্প্যানের ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। সেতুতে একটি রেললাইন থাকবে। তবে এর ওপর দিয়ে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ দুই ধরনের ট্রেন চলাচলেরই ব্যবস্থা থাকবে। ভায়াডাক্টে এসে যানবাহন ও ট্রেনের পথ আলাদা হয়ে মাটিতে মিশেছে।
২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতু নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিস্তারিত সমীক্ষার পর ২০০৪ সালে মাওয়া-জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণের পরামর্শ দেয় জাপানের দাতা সংস্থা জাইকা। ২০০৭ সালে একনেকে পাস হওয়া পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। ২০১১ সালে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় দফা সংশোধনের পর ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি। এরপর প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন না করে ২০১৮ সালের জুনে আবারও ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। প্রকল্প শেষ হওয়ার আগে আরেক দফা প্রস্তাব সংশোধন করতে হবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে জিডিপি বৃদ্ধি পাবে বলে জাইকার করা সম্ভাব্যতা যাচাইসংক্রান্ত সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০৫ সালে এই সমীক্ষা করা হয়েছিল। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দরনগর চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
সি-তাজ.কম/এস.টি

Leave A Reply

Your email address will not be published.