রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) মোট ৭৮টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে রুয়েট প্রশাসন। এরইমধ্যে কিছু পদের নিয়োগ পরীক্ষা ও ভাইভা বোর্ড সম্পন্ন হয়েছে। আর কিছু পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি এসব নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে।
রুয়েট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া এ্ররইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ইন্সট্রুমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার, জুনিয়র ইন্সট্রুমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার, সহকারী প্রোগ্রামার, নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর), বিভিন্ন বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী, জুনিয়র সেকশন অফিসার, ইলেক্ট্রিশিয়ান, অফিস সহায়ক পদসহ মোট ৭৮টি পদ রয়েছে রুয়েটে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই রুয়েটে সব পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলেও জানা গেছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে রুয়েটের কিছু পদে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা জানান, সরকারি বিধি অনুসারে পরীক্ষার নির্ধারিত তারিখের অন্ততপক্ষে ১৫ কার্যদিবস পূর্বে ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করে প্রার্থীদের ঠিকানায় পাঠাতে হয়। কিন্তু রুয়েটে এই সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে নির্ধারিত নিয়োগ পরীক্ষার মাত্র পাঁচ থেকে সাতদিন পূর্বে ইন্টারভিউ কার্ড পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ছেড়েছে। এতে অনেকেই পরীক্ষা দিতে ব্যর্থ হন।
তাদের অভিযোগ, রুয়েট প্রশাসন তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ নিশ্চিত করার স্বার্থেই সরকারি বিধি লঙ্ঘন করেছে। যাতে দূর-দূরান্তে থাকা চাকরি প্রার্থীরা প্রস্তুতি নিয়ে ভাইভা দিতে না আসতে পারেন।
বিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম শেখ স্বীকার করলেও তিনি জানান ভিন্ন কথা। তার ভাষ্যে, ‘এখন ইন্টারনেটের যুগ। সব তথ্য ইন্টারনেটে ভেসে বেড়াচ্ছে। কার্ড দেরিতে ইস্যু হলেও কোনো সমস্যা নেই। যোগ্য প্রার্থীরা যদি কার্ড ছাড়াই পরীক্ষা দিতে আসেন, তারপরও আমি তাদের পরীক্ষা নেব। এতে কোনো সমস্যা হবে না।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিধি-অনুযায়ী চাকরি প্রত্যাশীর কোনো আত্মীয়-স্বজন নিয়োগ বোর্ড কিংবা নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে পারবে না। এ নিয়মও লঙ্ঘন করেছে রুয়েট প্রশাসন। পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক ও বর্তমান ছাত্রকল্যাণ সমিতির পরিচালক ড. রবিউল আওয়ালের স্ত্রী তাশনুভা হুমায়রা ১৩নং সিরিয়ালে সহকারী প্রকৌশলী (পুর) পদে আবেদন করেছেন। এছাড়া তিনি (তাশনুভা) সেকশন অফিসার পদেরও চাকরি প্রত্যাশী। অথচ, শিক্ষক রবিউল আওয়াল নিয়োগ বোর্ডের সদস্য। বিধি মোতাবেক এটি রুয়েটের প্রচলিত গেজেটের ১৯ জুলাই, ২০০৩-এর চাকরির শর্তাবলী ৪৪ এর (২) ধারার পরিপন্থী।
শুধু তাই নয়, নিয়োগ কমিটির সদস্য রবিউল আওয়ালের স্ত্রী তার তথ্য ফরমে স্বামীর নাম গোপন করে বাবার নাম ব্যবহার করেছেন। স্ত্রীকে চাকরি পাইয়ে দেয়ার জন্যই তিনি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হয়েছেন বলে একাধিক অভিযোগকারী জানিয়েছেন। এতে নিয়োগ প্রক্রিয়াতে নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
রুয়েটের কর্মকর্তা সিলেকশন কমিটিতে আছেন কি-না তা জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. রবিউল আওয়াল স্বীকার করেছেন। তার স্ত্রী তাশনুভা হুমায়রা সহকারী প্রকৌশলী (পুর) ও সেকশন অফিসার পদে চাকরি প্রত্যাশী কি-না জানতে চাইলে সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন নামাজের সময় হয়ে যাচ্ছে কথা বলতে পারব না। যা জানার তা আগামীকাল অফিসে আসেন সরাসরি কথা হবে। এসব বিষয় ফোনে বলতে পারব না।’
অন্যদিকে, সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতাদের ‘তদবির’ ও ‘চাপ’-এর গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে রুয়েট নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে। এতে সরকারি বিধি মোতাবেক ৫০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের নিয়োগ প্রাপ্যতা থাকলেও যোগ্য প্রাপ্যতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন অনেকেই। নিয়োগ পরীক্ষা দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত নোটিশ বোর্ডে ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। এর কারণ হিসেবেও অভিযোগকারীরা দুষছেন নিয়োগে অনিয়মসহ সরকারি বিধি না মেনে বিভিন্ন উচ্চ মহলের ‘তদবির’ ও ‘চাপ’ নিয়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, ‘রুয়েটে নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) পদে আগামী ২৭ মার্চ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় ২০ বছর ধরে একই পদে কর্মরত রয়েছি। কাম্য যোগ্যতারও সমস্যা নেই। এমনকি ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ নেতৃত্বেও ছিলাম। এরপরও আমার বৈধ পদোন্নতি আমি পাচ্ছি না।’
নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে নানা অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়ে রুয়েট উপাচার্য বলেন, ‘নিয়মের মধ্যে থেকে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যেসব অভিযোগ উঠেছে তা ভিত্তিহীন ও মনগড়া। মানুষ অনেক কথাই বলে, সবকিছু বিশ্বাসযোগ্য না। যোগ্য প্রার্থীদেরকেই বেছে নেয়া হবে।’
নিয়োগ কমিটিতে সরকারি বিধি লঙ্ঘন ও ছাত্রলীগের চাপ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ ও সাধারণ প্রার্থীর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সবাই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। যোগ্যরাই চাকরি পাবে। এখানে তদবির বা চাপের কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিয়োগ কমিটির মধ্যে কোনো সদস্যের আত্মীয় চাকরি প্রত্যাশী আছে কিনা তা আমার জানা নেই। এমন হয়ে থাকলে সে বিষয়ে পরে তদন্ত করে দেখা হবে।’
সি-তাজ২৪.কম/এস.টি