বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন মেধাবী চৌকস কর্মকর্তা ছিলেন মেজর জয়নুল আবেদীন চৌধুরী। যার অনন্য অবদানের জন্য সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদকে ভূষিত হয়েছিলেন একাধিকবার। ১৯৫৮ সালে ১৬ আগষ্ট চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম সারোয়াতলী গ্রামের সভ্রান্ত চৌধুরী পরিবারে জন্ম নেন তিনি। ভারতের আসাম ওয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা বজল আহম্মেদ চৌধুরীর ৬ পুত্র ১ কন্যার মধ্যে দ্বিতীয় হচ্ছেন জয়নুল। ছোট বেলা থেকেই ছিল খুব দৃঢ়চেতা, শান্ত প্রকৃতির। ছাত্র হিসেবেও ছিল অত্যন্ত মেধাবী ও বিনয়ী।
১৯৬৪ সালে পশ্চিম সারোয়াতলী জজ্ জুনিয়র হাই স্কুলে প্রকাশ সাইরা মাস্টার স্কুল (বর্তমানে বিলুপ্ত) থেকে ৫ম শ্রেণি শেষ করে ভর্তি হন ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী বিদ্যাপীঠ কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ বিদ্যালয় হতে ১৯৭৪ সালে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এস. এস. সি. পরীক্ষায় দুই বিষয়ে লেটার মার্ক সহ ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে যথারীতি লেটার মার্কসহ ১ম বিভাগে এইচ. এস. সি. পাশ করেন। পরে প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই সময়ে চান্স পেয়ে যান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন ক্যাডেট হিসেবে। সে সময় কোনটিকে বেচে নিবেন এমন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন তুখোড় এ মেধাবী ছাত্র। পরে অনেকের পরামর্শে ১৯৭৮ সালে সেকেন্ড লং কোর্সে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে। সফলতার সহিত দু’বছরের ট্রেনিং শেষ করে ১৯৮০ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদ মর্যাদায় কমিশন অফিসার হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনে কর্মজীবন শুরু করেন।
সেনাবাহিনীতে কর্মকালীন সময়ে তারঁ গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় পদকে ভূষিত হয়েছিলেন বেশ কয়েক বার। সে সময়ে সেনাবাহিনীর জন্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন না থাকলেও মেধাবী অফিসার হিসেবে ট্রেনিং ও রাষ্ট্রীয় কাজে বিভিন্ন দেশ সফর করেন তিনি। তৎসময়ে চীনে অনুষ্ঠিত ওয়াল্ড স্টেট ইনটেলিজেন্স ট্রেনিং এ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর সাথে প্রতিযোগিতামূলক প্রশিক্ষণে ৪র্থ হওয়ার গৌরব অর্জন করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন চৌকস মেধাবী এ সেনা কর্মকর্তা। ৯০ দশকের শেষের দিকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ক্যান্টনমেন্টে বি,এম এর দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে সুযোগ পান মীরপুর আর্মি স্টাফ কলেজে সেনাবাহিনীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পি,এস,সি কোর্সে। সফলতার সাথে পি.এস.সি শেষ করে লেঃ কর্নেল হওয়ার পর সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে স্থায়ী ভাবে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ওখানে দীর্ঘদিন কাজ করেন মার্কিন ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিতে। কাজ করেন প্যারাগন হোন্ডার ডিরেক্টর ফিন্যান্স হিসেবেও।
বিয়ে করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন সিলেট থেকে তৎসময়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্য পরে রাষ্ট্রদূত ব্যারিস্টার মুনতাকিন চৌধুরীর মেয়ে পিয়নী চৌধুরীকে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে ২০১৫ সালের ৮ই এপ্রিল হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অল্প বয়সে না- ফেরার দেশে পাড়ি জমান দেশের মেধাবী এই কৃতি সন্তান।