G-VV5KW25M6F
Take a fresh look at your lifestyle.

0

শঙ্খের ভাঙ্গনে তলিয়ে গেছে পুকুরিয়ার ১২টি পরিবারের ঘরবাড়ি , খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন ক্ষতিগ্রস্তদের।

মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের,বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার আনোয়ারা-বাঁশখালী সীমন্তের পুকুরিয়ায় ইউনিয়ন ও খানখানাবাদ এলাকায় শঙ্খ নদীর ভাঙ্গন যেন কোন কিছুতেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না । একদিকে ভাঙ্গন বন্ধ করলে শুরু অন্যদিকে ভাঙ্গনের তালিকায় যোগ হয় নতুন নতুন নাম। বাশঁখালী ১ নং পুকুরিয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়াডের্র তেচ্ছিপাড়া গ্রামে ও সাধনপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্র্ড়ের রাতাখোর্দ্দ জলদাশ পাড়া ও কৈর্তব পাড়ার বাড়িঘর, মাদ্রাসা, রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি, মৎস্য পুকুর, মসজিদ, গরু-হাঁস মুরগীর খামার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে । গত সপ্তাহের টানা বর্ষণে শঙ্খ নদীর পানির স্রোতে অর্ধশতাধিক পাকা দালান, বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে আশ্রয়ীন হয়ে পড়েছে ১২ টি পরিবার। আশ্রয়হীন পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকেই অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছে শঙ্খ নদীর বাঁধের উপর, রাস্তার ধারে, আত্বীয়-স্বজনের বাড়িতে। ভাঙনের মুখে রয়েছে আরো অর্ধশতাধিক পরিবার। যে কোন সময় নদীগর্ভে বিলীনহতে পারে ভাঙনের মুখে থাকা বাড়িঘর। অন্য দিকে সাধনপুর রাতাখোর্দ্দ এলাকায় গত কয়েক বছর কয়েকশ পরিবার শঙ্খ নদীর ভাঙ্গন এর কবলে পড়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। সোমবার (০২ আগষ্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরিয়া শঙ্খ নদীর স্রোতের তোড়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সাধনপুর, খানখানাবাদ ও পুকুরিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা। বিগত কয়েক বছর পূর্বে ইম্বরবাবুর হাট থেকে পশ্চিম দিকে ৪ শ কিলোমিটার বল্ক বসালে ও পুনরায় আবারো অন্য দিকে ভাঙ্গন দেখা দেয়। প্রতিবছর নদীভাঙনের সৃষ্টি হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন প্রতিরোধে পরিকল্পিত কোন উদ্যোগ না নেয়ায় নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। জেলেপাড়া সংলগ্ন এক সময়ের নামকরা বাজার ঈশ্বরবাবুর হাট । যেখানে একসময় কয়েকশ দোকানপাট থাকলে ও বর্তমানে হাতেগুনা কয়েকটা দোকান রয়েছে মাত্র। জেলেপাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জলকদর খালটি একসময় ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা নেওয়ার অন্যতম যাতায়াত মাধ্যম । খালের পশ্চিম পার্শ্বে খানখানাবাদ ইউনিয়নের প্রেমাশিয়া রায়ছটা পূর্বপার্শ্বে সাধনপুর ইউনিয়নের জেলেপাড়া, কৈবত্য পাড়া, রাতাখোর্দ্দ সহ অন্যান্য পাড়া গুলো অবস্থিত। বর্তমানে প্রতিদিন জেলেপাড়া, কৈর্বত্য পাড়ার বাড়িঘর গুলো শঙ্খের জোয়ারের পানিতে ডুবছে। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষনে পানির তীব্র আক্রমনে অধিক ঘর বাড়ি ভাঙ্গনের সম্মুখিন দেখা দিয়েছে । পাশাপাশি আরো অর্ধশতাধিক বাড়ি ঘরের একই অবস্থা । তাই নিরুপায় হয়ে সাগর পানে চেয়ে চেয়ে দিন পার করছে তারা । একসময় জেলেপাড়া, কৈবত্য পাড়াসহ রাতাখোর্দ্দ এলাকা ঘিরে ছিল ৪শতাধিক পরিবারের একটি পাড়া । ১৯৯১ এর ঘুর্ণিঝড় এর পর থেকে ভাঙ্গন শুরু হলে সে ভাঙ্গনের তোড়ে নি:স্ব হয়ে কয়েকশ পরিবার গৃহহীন হয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়।

অপরদিকে পুকুরিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পুকুরিয়া (তেচ্ছি পাড়া) শঙ্গের নদীর গর্বে প্রায় শতাধিক বসত ভিটা হুমকির মুখে পড়েছে। নদী গর্ভে পড়ে বিলীন হয়ে গেছে স্থানীয় মৃত হাফেজ আহমদ পুত্র জমির উদ্দীন,নাছির উদ্দীন, নেজাম উদ্দীন ,নুর উদ্দীন,মৃত ছালেহ আহমদ পুত্র আবু বক্কর,বেদার আহমদ, সোলতান আহমদ,আবব্দুল লতিফ, নুরুল আলম,মনজুর আহমদ,মোঃ সেলিম উদ্দীন,সিরাজুল কবীর সহ ১২ টি পরিবার।

পুকুরিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়াডের্র পশ্চিম পুকুরিয়া (তেচ্ছি পাড়া) এলাকার মোঃ নেজাম উদ্দীন বলেন, গত কয়েকবছর যাবৎ ভাঙ্গনের তোড়ে নি:স্ব হয়ে শতাধিক পরিবার চলে গেছে বাধ্য হয়ে । তাদের মধ্যে অনেকে চট্টগ্রাম শহরে, বানীগ্রাম, সহ বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে । আমরা যারা অসহায় সম্ভলহীন তারা এখনো মৃত্যুর দুয়ারে বসে আছি । আমাদের পরিবার এ পর্যন্ত ৫ বার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে গৃহহীন হই । এবার একেবারে নদীগর্ভে আমাদের পুরা বাড়ী বিলীন হয়ে গেল। বর্তমানে কোন রকম বেঁচে আছি বহু কস্ট করে। স্থায়ী বেঁড়িবাধ না থাকায় প্রতিনিয়ত ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে এ এলাকার জনগনের বাড়িঘর ।

রায়ছটা গ্রাম এলাকার মোঃ বোরহান উদ্দীন বলেন, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষনে পানির তীব্র আক্রমনে প্রতিবছরের মত এই বার ও জেলে পাড়া, কৈবত্য পাড়া,রাতাখোর্দ্দ এলাকায় বাড়ি ঘর না ভাঙ্গলেও বাঁধটি ভাঙ্গনের মুখে পড়ে ।


নতুন করে বাঁধটি সংস্কার না হলে হারিয়ে যাবে এ জেলে ও কৈর্বত্য পাড়াটি।
পুকুরিয়া ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরিদ আহমদ বলেন, পুকুরিয়া ইউনিয়নে সাঙ্গু নদী সংলগ্ন কয়েক কিলোমিটার এলাকা ভাঙনপ্রবণ। গত কয়েক বছর ধরে অব্যাহত ভাঙনে পুকুরিয়া গ্রামের বিপুল পরিমাণ এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ এলাকার ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মাননীয় সংসদ সদস্য ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীকে দরখাস্তের মাধ্যমে জানানো হয়েছে।

পুকুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ মাহবুব আলী বলেন, আমাদের পুকুরিয়া তেচ্ছিপাড়া এলাকায় প্রতিবছর নদী গর্ভে বাড়ি ঘর বিলীন হয়ে যায়। এই বছর ও টানা বর্ষনে নদী গর্ভে ১২ টি ঘর বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গন রোধে জরুরী কাজের অংশ হিসেবে ২ শত মিটার জায়গায় নতুন কওে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার জিও ব্যাগ বসানো হবে। জরুরী কাজের অংশ হিসেবে ২৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মৌখিক নির্দেশনায় জিও ব্যাগ বসানোর জন্য ব্যবস্থা করে হয়েছে। এখনো ও কাজের ওয়ার্কাটার দেওয়া হয়নি। কাজ চলমান আছে। ইতি মধ্যে মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমানের সার্বিক সহযোগিতায় পানি উন্নয়ন র্বোড ২ মিটার বাঁধে জিও ব্যাগ বসানোর উদ্দ্যেগ গ্রহন করা হয়েছে। আগামী কাল থেকে ভাঙ্গন রোধে এসব জিও ব্যাগ বসানো হবে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা
বলেন, শঙ্খ নদীর ভাঙ্গন রোধে পুকুরিয়া তেচ্ছিপাড়ায় জরুরী ভিত্তিতে ২ শ মিটার কাজের অনুমোদন হয়েছে। বৃষ্টির কারনে একটু সমস্যা হয়েছে। নতুন করে ২৮ লক্ষ টাকা জরুরী কাজের অংশ হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভাঙ্গন রোধে উক্ত বাঁধে সাড়ে ৭ হাজার জিও ব্যাগ আগামী কাল থেকে বসানোর হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.