G-VV5KW25M6F
Take a fresh look at your lifestyle.

” ইসলামী শাসনতন্ত্র ও অমুসলিমদের অধিকার”

-মো.শওকত হোসেন চৌধুরী রিপন

0

 

যুগের পরিবর্তন হয়েছে! সাথে সাথে পরিবর্তন হয়েছে মানুষের রুচির। নানান সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি মানুষ সম্মুখীন হচ্ছে নানান সমস্যার। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতির এক এক নীতির সমস্যা সমাধানের জন্য নীতিনির্ধারকেরা পড়ছে বিপাকে। সভ্যতার পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষ অাত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে, হয়ে যাচ্ছে স্বার্থপর, নিজের সুখ শান্তি ও স্বার্থকে সবার উপরে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সমাজে বেড়ে যাচ্ছে ঘুষ, দুর্নীতি, হত্যা ও ধর্ষণের মত নানান পৈশাচিক অপরাধ।

এমন সময় এক শ্রেণির মানুষ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ইসলামী শাসনতন্ত্র দাবি করে আসছে, তাদের দাবি ৯২% মুসলমানদের এদেশে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলে এসকল সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তুু এদেশে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হলে ১ কোটি ৪৪ লক্ষ হিন্দুু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানদের ভাগ্যে কি হবে? তাদের কি দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে? এমন একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন কিন্তুু আমাদের সামনে এসে দাড়ায়। কারণ শাসনতন্ত্রের নামের আগে ইসলাম আছে! তাই ইসলামী শাসনতন্ত্রের কথা আসলে কিছু নাস্তিক, জামায়াত ইসলাম ও হেফাজত ইসলামের কিছু ভয়ংকর কর্মকান্ডের চিত্র তুলে ধরে আমাদের সামনে!

জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে এদেশের নীতিনির্ধারকেরা ইসলামী শাসনতন্ত্রকে ব্যঙ্গ করে বলে, ইসলামী আইন অনুযায়ী চুরি করলে হাত কাঁটার যে বিধান আছে এ বিধান এদেশে কায়েম করলে এ জাতি হাত কাঁটা জাতিতে পরিণত হবে!
তিনি ইসলামকে ব্যঙ্গ করতে গিয়ে যে,এ জাতিকে চোরের জাতি বলেছেন তা হয়তো তিনি বুঝতেই পারেননি! এটাই নিয়ম কারও দিকে আপনি একটা আঙ্গুল তুললে তিনটা আঙ্গুল আপনার দিকে উঠবে। আর এটাতো সৃষ্টিকর্তার একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম।

সম্প্রতি নরকীয় ও পৈশাচিক ধর্ষনের পাশাপাশি যে হারে শিশু ধর্ষণ বেড়েছে তা যেকোনো বিবেকবান মানুষের বিবেককে প্রচন্ডভাবে নাড়া দেয়। তিন-চার বছরের শিশুর যৌনাঙ্গ ব্লেড দিয়ে কেঁটে ধর্ষনের মত অমানবিক, বর্বর ও চরম মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো যেকোনো সচেতন মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়। এসময় ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে ধর্ষনের শাস্তি প্রকাশ্যে মৃত্যুদন্ড দাবি উঠেছে প্রায় সব মহল থেকে। এমন সময় মনের অজান্তে ইসলামী শাসনতন্ত্রের কথা আবারও সামনে এসে দাঁড়ায়!

চলুন দেখি এদেশে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে এদেশের অমুসলিমদের ভাগ্যে কি হতে পারে!
ইসলাম মানে শান্তি আর সমাজে বা রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে মাঝে মাঝে একটু কঠোর হতে হয়। গণতন্ত্রের জনক জন লক বলেছেন,”যেখানে আইন নেই সেখানে স্বাধীনতা নেই।” তাই স্বাধীনতার সুফল লাভের জন্য প্রয়োজন যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন যা সকল স্তরের মানুষের জন্য কল্যাণকর। আর মহান আল্লাহ রাব্বুল অা’লামীন বিশ্ব নবীর মাধ্যমে আমাদের যে সমাজব্যবস্থা দিয়েছেন তা সর্বস্তরের মানুষের জন্য মঙ্গলজনক। আল্লাহ পাক বলেন,”হে নবী আমি আপনাকে সমস্ত সৃষ্টির জন্য রহমত স্বরুপ প্রেরণ করেছি”(আল কোরঅান)। আর সমস্ত সৃষ্টির জন্য যিনি রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন তিনি বলেন, “অমুসলিমদের অধিকার রক্ষা করা আমার উপর আরোপিত বিশেষ কর্তব্যগুলোর একটি”(সুনাহু বায়হাজী, ৮খন্ড, পৃ-৮০)। তিনি সমগ্র মুসলিম জাতিকে সাবধান করে দিয়ে বলেন, সাবধান!তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমদের উপর নির্যাতন চালাবে, তার অধিকার খর্ব করবে, তাকে দুঃখ দেবে অথবা তার অনুমতি ব্যতীত তার কাছ থেকে কোনো কিছু ছিনিয়ে নিবে, জেনে রাখো কিয়ামতের দিন আমি তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিবো(সুনানু আবি দাউদ ৩/১৭০)। তিনি আরো বলেন- যদি কোনো মুসলিম কোনো নিরাপরাধ অমুসলিমকে বিনা কারণে হত্যা করে, তাহলে সে জান্নাতের খুশবো পর্যন্ত পাবেনা। যদিও এই খুশবু ৪০ হাজার বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়(সহীহ বুখারী ০৩/২২৯৫)।

কল্পনা করতে পারেন? ইসলাম অমুসলিমদের অধিকার রক্ষার্থে কত কঠোর? ইতিহাস সাক্ষী ইসলামের খেলাফতের যুগে পৃথিবীতে যে শাসনব্যবস্থা ছিল,তা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য মঙ্গলজনক ছিল।” দ্য হিস্ট্রি অব উমর, আলি তানবারি পৃ-১৫৫-১৫৬ পৃষ্টায় ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা.) এর শাসনব্যবস্থার একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। মিশরের গভর্ণর ইবনুল আয(র.) পুত্র মুহাম্মদ এর একটি ঘোড়া হারিয়ে গেছে,তিনি একদিন সফর করে আসার সময় দেখলেন একটা লোক ঘোড়ার উপর আরোহণ করে আসছেন(তিনি অমুসলিম ছিলেন) গভর্ণরের ছেলে মুহাম্মদ বললেন,এটাতো আমার ঘোড়া। অমুসলিম লোকটি বলল, না! এটা আমার ঘোড়া। তাদের মধ্যে এ নিয়ে তর্ক হলো।এবং একপর্যায়ে মিশরের গভর্ণরের ছেলে মুহাম্মদ তাকে চাবুক মারতে শুরু করলেন। সেই অমুসলিম ব্যক্তিটি বিচারের জন্য মিশর থেকে মদিনায় হযরত উমর (রা.) কাছে চলে আসলেন এবং পুরো ঘটনা তাকে খুলে বললেন। ঘটনা শুনার পর উমর(রা.) মিশরের গভর্ণর ইবনুল আস(রা.) ও তার পুত্র মুহাম্মদকে চিঠি লিখলেন এবং চিঠি পাওয়ার সাথে সাথে তাদের দুজনকে মদিনায় হাজির হবার নির্দেশ দিলেন। চিঠি পেয়ে ইবনে আস (রা.) ও তার পুত্র মুহাম্মদ, উমর(রা.) এর কাছে হাজির হলেন। তিনি তাদের বললেন,তোমরা মানুষকে দাস মনে করছো কখন থেকে? তিনি একটি চাবুক সে অমুসলিম ব্যক্তির হাতে দিয়ে বললেন,আঘাত কর। যেভাবে তোমাকে আঘাত করা হয়েছে।অমুসলিম ব্যক্তিটি মুহাম্মদ ইবনে আস(রা.) কে আঘাত করতে লাগল।এক পর্যায়ে সে ক্লান্ত হয়ে উমর(রা.) এর কাছে আসলেন। উমর (রা.) তাকে বললেন, এবার এ চাবুক দিয়ে আমার মাথায় আঘাত কর। কারণ আমি তোমাকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছি।

এটাই ইসলামী শাসনতন্ত্র, এটাই ইসলামের সৌন্দর্য।।

লেখকঃ মুহাম্মদ শওকত হোসেন চৌধুরী রিপন

Leave A Reply

Your email address will not be published.