G-VV5KW25M6F
Take a fresh look at your lifestyle.

মদিনা শরীফে মসজিদে নববীর ইতিহাস।

সোহেল মো.ফখরুদ-দীন

0

 

সৌদি আরবের মদিনা শরীফে প্রিয় নবীজী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর পবিত্র রওজা মোবারক ও মসজিদে নববীর ইতিহাস মুসলমানদের কাছে অতি পবিত্র ও মুল্যবাদ।এই পবিত্র মসজিদ আমাদের প্রিয় নবীজী (সা:) নিজেই নির্মান করেন।এই মসজিদ ” মসজিদে নববী নামে পরিচিত।মসজিদের সাথেই আমাদের দয়াল নবী রাসুলে খোদা (সা:) এর পবিত্র রওজা মোবারক অবস্থিত।গত বছরের মে ও জুন ২০১৯ সালে আমি পবিত্র ওমরাহ হজ আদায়ের জন্য সৌদিআরব গমন করি।ওমরাহ হজ শেষে নবী করিম (সা:) এর রওজা মোবারক জিয়ারতের জন্য মদিনা শরীফ গমন করি। মদিনা শরীফে অবস্থান কালে এই মদিনা শরীফের পবিত্র নিদর্শন গুলো দেখা ও দীর্ঘ সময় মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় করার সুযোগ হয়। মহান খোদার দরবারে শুকরিয়া যে, তিনি আমাকে রাসুলে খোদা ( সা:) এর রওজা মোবারক জিয়ারত ও দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন।আমার এই আলোচিত ইতিহাস প্রবন্ধে মদিনা শরীফ, মসজিদে নববীর ইতিহাস পাঠক সমীপে তুলে ধরছি। পবিত্র মসজিদে নববী হযরত মুহাম্মদ (সা:) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মসজিদ যা বর্তমান সৌদি আরবের মদিনা শরীফে অবস্থিত। গুরুত্বের দিক থেকে মসজিদুল হারামের পর মসজিদে নববীর স্থান।হযরত মুহাম্মদ (সা:) হিজরত করে মদিনায় আসার পর এই মসজিদ নির্মান করেন। এটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ মসজিদ। এ মসজিদ দিনরাতের সবসময় খোলা থাকে।
মসজিদে নববীর অবস্থান :
আদি নাম হেজাজ, সৌদি আরব প্রশাসন সৌদি আরব সরকারের মসজিদস্থাপত্য শৈলীধ্রুপদি ও রীতিতে করা। সাম্প্রতিক ইসলামি উসমানীয় মামলুক পুনরুত্থানকারী প্রতিষ্ঠার তারিখ ৬২২ খ্রিষ্টাব্দ নির্দিষ্টকরণধারণ ক্ষমতা ৬,০০,০০০ (হজ্জের সময় এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১০,০০,০০০ হয়)।
মিনার সমূহ ১০ মিনারের উচ্চতা ১০৫ মিটার (৩৪৪ ফুট)। হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর বাসগৃহের পাশে এই মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। তিনি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে মসজিদের নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছিলেন। সে সময় মসজিদ সম্মিলনস্থল, আদালত ও মাদ্রাসা হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। পরবর্তীকালের মুসলিম শাসকরা মসজিদ সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্য বর্ধন করেছেন।
১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে আরব উপদ্বীপের মধ্যে মদিনা শরীফে সর্বপ্রথম বৈদ্যুতিক আলোর বাতি জ্বালানো হয়। এই মসজিদ, মসজিদ খাদেমুল হারামাইন শরিফাইনের নিয়ন্ত্রণে থাকে। মসজিদ ঐতিহ্য গতভাবে মদিনার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। মসজিদে নববী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান বিধায় হজ্জের সময়ে আগত হাজিরা হজ্জের আগে বা পরে মদিনায় অবস্থান করেন উমাইয়া খলিফা প্রথম আল ওয়ালিদের শাসনামলে সম্প্রসারণের সময হয়রত মুহাম্মদ (সা:) এবং প্রথম দুই খোলাফায়ে রাশেদিন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:)ও হযরত ওমর ( রা:) এর কবর নবীজীর রওজার সাথে মসজিদের অংশে নিয়ে নেওয়া হয়।মসজিদের দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থিত সবুজ গম্বুজ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এটি হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) এর বাড়ি ছিলো।এখানে হযরত মুহাম্মদ (সা:) এবং তাঁর পরবর্তী শাসক দুইজন খলিফাকে দাফন করা হয়। ১২৭৯ খ্রিষ্টাব্দে হযরতের রওজা মোবারকের উপর একটি কাঠের গম্বুজ নির্মিত হয়। এটি পরবর্তীতে ১৫শ শতাব্দীতে কয়েকবার এবং ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে একবার পুনঃর্নির্মিত ও সৌন্দর্য‌ বর্ধি‌ত করা হয় মর্মে ইতিহাস থেকে জানাযায়। বর্তমান গম্বুজটি ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ কর্তৃক নির্মিত হয় এবং ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম সবুজ রং করা হয়। ফলে এর নাম সবুজ গম্বুজ হয়েছে। হিজরতের পর হযরত মুহাম্মদ (সা:) এই মসজিদ নির্মাণ করেন।তিনি একটি উটে চড়ে মসজিদের স্থানে আসেন। এই স্থানটি দুইজন বালকের মালিকানায় ছিল। তারা মসজিদের জন্য জায়গাটি বিনামূল্যে উপহার হিসেবে দিতে চাইলেও হযরত মুহাম্মদ (সা:) জায়গাটি ক্রয় করে নেন। এরপর এখানে মসজিদ নির্মিত হয়। এর আকার ছিল ৩০.৫ মিটার (১০০ফুট × ৩৫.৬২ মিটার (১১৬.৯ ফুট) খেজুর গাছের খুটি দিয়ে ছাদের কাঠামো ধরে রাখা হয়। ছাদে খেজুর পাতা ও কাদার আস্তরণ দেয়া হয়। এর উচ্চতা ছিল ৩.৬০ মিটার (১১.৮ ফট) এর তিনটি দরজা ছিল দক্ষিণে ১) বাব-আল-রহমত, পশ্চিমদিকে ২) বাব-আল-জিবব্রাল এবং পূর্বদিকে ৩) বাব-আল-নিসা। খায়বারের যুদ্ধের পর মসজিদ সম্প্রসারণ করা হয়। এটি প্রত্যেক দিকে ৪৭.৩২ মিটার (১৫৫.২ ফট) বৃদ্ধি পায় এবং পশ্চিম দেয়ালের পাশে তিন সারি খুটি নির্মিত হয়। প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক এর শাসনামলে মসজিদের আকার অপরিবর্তিত ছিল। দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা:)মসজিদের আশে পাশে হযরত মুহাম্মদ(সা:) এর স্ত্রীদের বাড়িগুলো ছাড়া বাকিগুলো সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করেন।নতুন অবস্থায় মসজিদের আকার দাঁড়ায় ৫৭.৪৯ মিটার (১৮৮.৬ ফট) × ৬৬.১৪ মিটার (২১৭.০ ফট)। দেয়াল নির্মাণে মাটির ইট ব্যবহার করা হয়। মেঝেতে পাথর বিছানোর পাশাপাশি ছাদের উচ্চতা বৃদ্ধি করে ৫.৬ মিটার (১৮ ফট) করা হয়। এছাড়াও হযরত ওমর (রা:)আরো তিনটি দরজা সংযুক্ত করেন।
তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান (রা:) নতুন করে মসজিদ নির্মাণ করেন। এই নির্মানে দশ মাস সময় লাগে। নতুন মসজিদের আকার দাঁড়ায় ৮১.৪০ মিটার (২৬৭.১ ফুট) × ৬২.৫৮ মিটার (২০৫.৩ ফুট)। দরজার সংখ্যা ও নাম অপরিবর্তিত রাখা হয়। পাথরের দেয়াল নির্মিত হয় এবং খেজুর গাছের খুটির বদলে লোহা দ্বারা সংযুক্ত পাথরের খুটি যুক্ত করা হয়। ছাদ নির্মাণের জন্য সেগুন কাঠ ব্যবহার করা হয়।পরবর্তিতে ৭০৭খ্রিষ্টাব্দে উমাইয়া খলিফা প্রথম আল ওয়ালিদ মসজিদ সম্প্রসারণ করেন। এই কাজে তিন বছর সময় লেগেছিল বলে ইতিহাস থেকে জানাযায়। মসজিদের জন্য কাঁচা মাল বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য থেকে সংগ্রহ করা হয়। মসজিদের এলাকা উসমানের সময়ের ৫০৯৪ বর্গ মিটার থেকে বৃদ্ধি করে ৮৬৭২ বর্গ মিটার করা হয়। মসজিদ ও হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর বিবিদের আবাসস্থলগুলো আলাদা করার জন্য দেয়াল নির্মিত হয়। মসজিদ ট্রাপোজয়েড আকারে নির্মিত হয়, যার দৈর্ঘ্য ছিল ১০১.৭৬ মিটার (৩৩৩.৯ ফুট)। মসজিদের উত্তরের একটি বারান্দা যুক্ত করা হয়। এছাড়াও এসময় চারটি মিনার নির্মিত হয়।
আব্বাসীয় খলিফা আল মাহদি উত্তর দিকে মসজিদ ৫০ মিটার (১৬০ ফুট) সম্প্রসারণ করেন। মসজিদের দেয়ালে তার নাম উৎকীর্ণ করা হয়। ইবনে কুতাইবার বিবরণ অনুযায়ী খলিফা আল মামুন এতে কাজ করেছেন। আল মুতাওয়াক্কিল হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর রওজার বাইরে মার্বেল পাথর ব্যবহার করেন। আল-আশরাফ কানসুহ আল-গাউরি ১৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দে রওজার উপর পাথরের গম্বুজ নির্মাণ করেন। রওজা মসজিদের দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত।এটি গম্বুজের নিচে অবস্থিত। যা ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদের শাসনামলে নির্মিত হয়। ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে গম্বুজে সবুজ রং করা হয় এবং এরপর থেকে এর নাম সবুজ গম্বুজ হয়। সুলতান প্রথম আবদুল মজিদ ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদ পুনঃর্নির্মাণ শুরু করেন। এতে মোট ১৩ বছর লেগেছিল। মূল উপকরণ হিসেবে লাল পাথরের ইট ব্যবহার করা হয়। মেঝে ১২৯৩ বর্গ মিটার বৃদ্ধি করা হয়। দেয়ালে ক্যালিগ্রাফিক শৈলীতে কুরআনের আয়াত উৎকীর্ণ করা হয়। মসজিদের উত্তরে কুরআন শিক্ষার জন্য মাদ্রাসা নির্মিত হয়।
এর পর আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ মদিনা অধিকার করে নেয়ার পর মদিনা শরীফের বিভিন্ন পবিত্র সমাধিগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। তবে সবুজ গম্বুজটিকে অক্ষত রাখা হয়। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে আগের নাম পরির্বতন করে সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার পর মসজিদে কয়েক দফা সংস্কার করা হয়। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে ইবনে সৌদ মসজিদের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে নামাজের স্থান বাড়ানোর জন্য আবার কিছু স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলার আদেশ দেন। এসময় কৌণিক আর্চযুক্ত কংক্রিটের স্তম্ভ স্থাপন করা হয়। পুরনো স্তম্ভগুলো কংক্রিট ও শীর্ষে তামা দ্বারা মজবুত করা হয়। সুলাইমানিয়া ও মাজিদিয়া মিনার দুটি মামলুক স্থাপত্যের আদলে প্রতিস্থাপন করা হয়। উত্তরপূর্ব ও উত্তরপশ্চিমে দুটি অতিরিক্ত মিনার যুক্ত করা হয়। ঐতিহাসিক মূল্যের কুরআন ও অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ রাখার জন্য পশ্চিম দিকে একটি লাইব্রেরী স্থাপন করা হয় এবং কোরআন মিউজিয়াম করা হয়। আমি নিজেকো সৌভাগ্য মনে করছি একটি কারনে, আমি মদিনা শরীফ জিয়ারত কালে ঐতিহাসিক এই লাইব্রেরি ও কোরআন মিউজিয়াম পরিদর্শনের সুযোগ হয়। সৌদি প্রবাসী – যিনি আমার স্কুল ও কলেজ জীবনের বন্ধু মাহবুবুল আলম ফোন করে আমাকে কোরান মিউজিয়াম দেখার জন্য বলেন।
১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ মসজিদের অংশ হিসেবে ৪০,৪৪০ বর্গ মিটার যুক্ত করেন। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ফাহাদ বিন আবদুল আজিজের শাসনামলে মসজিদ আরো সম্প্রসারিত হয়। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে এর নির্মাণ সমাপ্ত হওয়ার পর মসজিদের আয়তন দাঁড়ায় ১.৭ মিলিয়ন বর্গ ফুট।
ইমাম ও খতিব: শাইখ আলি আল হুজাইফা, শাইখ আবদুল বারি আস-সুবাইতি, শাইখ হুসাইন আল-শাইখ, শাইখ আবদুল মুহসিন আল-কাসিম, শাইখ সালাহ আল-বুদাইর।
ইমাম: শাইখ আবদুল্লাহ আল-বুয়াইজান, শাইখ আহমাদ তালিব হামিদ। মুয়াজ্জিন: শাইখ আবদুর রহমান, শাইখ ইসাম বুখারি, শাইখ সৌদ বুখারি, শাইখ ইয়াজ শুখরি, শাইখ সামি দিওয়ালি, শাইখ উমর সুনবুল, শাইখ মাজিদ হাকিম, শাইখ আশরাফ আফিফি, শাইখ আবদুল মজিদ আস সুরাইহি, শাইখ ফয়সাল নুমান, শাইখ ইউসুফ কামাল। অতিথি ইমাম: শাইখ আলি আল সুদাইস, শাইখ মুহাম্মদ আইয়ুব, শাইখ খালিদ আল মুহান্না, শাইখ সাদ আল গামদি, শাইখ খালিদ আল গামদি, শাইখ আবদুল্লাহ আল জুহানি, শাইখ মাহির আল মুয়াইকালি, শাইখ আবদুল ওয়াদুদ হানিফ, শাইখ ইমাদ জুহাইর হাফিজ।মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে মক্কায় হজ ও পবিত্র মদিনা শরীফ জিয়ারত এবং মসজিদে নববীতে নামাজ আদায়ের সুযোগ দিক। আমিন।ছুম্মা আমিন।।

লেখকঃ ইতিহাস গবেষক

Leave A Reply

Your email address will not be published.