হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফি ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে মারা গেছেন। ইন্না-লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় ইন্তেকাল করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০৪ বছর। কাল দুপুর ২টায় হাটহাজারী মাদ্রাসা মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা পড়াবেন তাঁরই পুত্র আনাস মাদানী। পরে এ মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে হুজুরকে দাফন করা হবে, জানিয়েছেন মাদ্রাসার সূরা কমিটি।
ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নানা নাটকীয়তার পর গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে হেফাজতে ইসলামীর আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী দারুল উলুম মুইনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার ‘মুহতামিম’ এর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্রদের আন্দোলনের প্রথম দিনে প্রতিষ্ঠানটির সহকারি শিক্ষা সচিব এবং শাহ আহমদ শফির পুত্র মাওলানা আনাস মাদানীকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও আন্দোলন থামেনি। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাটহাজারী মাদ্রাসার সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে পরিপত্র জারি করেন । এঘটনার পর মাওলানা শাহ আহম্মদ শফি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসিউতে ভর্তিকরা হয়। আজ দুপুরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে রাজধানী ঢাকায় আজগর আলী হাসপাতালে নেয়া হয়। শতবর্ষী আল্লামা শাহ আহমদ শফী দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। অসুস্থতার কারণে এর আগেও কয়েকবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল।
এদিকে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহী আল্লামা শফীর মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, মাদরসার দখলদারেরা পরিকল্পিত ভাবে আল্লামা শফীকে হত্যা করেছে। গতকাল জোরপুর্বক পদত্যাগ করানোর পর কাউকে ছাড়াই তাঁকে এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। আজ দুইটায় হেলিকপ্টারে ঢাকায় নেওয়া হলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
এদিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফির মৃত্যুতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
আমরা আল্লামা শাহ আহমদ শফির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুক, আমিন।
শাহ আহমদ শফী আর নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক
হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী আর নেই। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার পর রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক শেখ আহমদ প্রথম আলোকে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। সন্ধ্যার সাতটার দিকে শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর খবর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ জানান, আহমদ শফীর বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর।
মাদ্রাসার দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আজ বিকেলে আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় আনা হয়। এরপর তাঁকে গেন্ডারিয়ার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন অসুস্থতা ছাড়াও ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনে ভুগছিলেন।
শাহ আহমদ শফীর জন্ম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম বরকম আলী, মা মোছাম্মাৎ মেহেরুন্নেছা বেগম। আহমদ শফীর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। তাঁর বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ পাখিয়ারটিলা কওমি মাদ্রাসার পরিচালক। ছোট ছেলে আনাস মাদানি হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক।
আহমদ শফীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায়। এরপর পটিয়ার আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (জিরি মাদ্রাসা) লেখাপড়া করেন। ১৯৪০ সালে তিনি হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় যান, সেখানে চার বছর লেখাপড়া করেন।
১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন আহমদ শফী। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন। ছাত্রদের বিক্ষোভের পর গত বৃহস্পতিবার রাতে হাটহাজারী মাদ্রাসার শুরা কমিটির সভায় আহমদ শফী মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তাঁর ছেলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালকের পদ থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর পরপরই মাদ্রাসা থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে আহমদ শফীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আহমদ শফী কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার চেয়ারম্যান ছিলেন।
দাফন শনিবার
শাহ আহমদ শফীর জানাজা শনিবার বেলা দুইটায় চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। মাদ্রাসার ভেতর উত্তর মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক মাওলানা শেখ আহমদ। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে রাতের মধ্যে হুজুরের (আহমদ শফী) মরদেহ মাদ্রাসায় আনা হচ্ছে। শনিবার বেলা দুইটায় মাদ্রাসার মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। দাফন করা হবে উত্তর মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে। শেখ আহমদ আরও বলেন, মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর রাতে মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা বসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাসস-এর খবরে বলা হয়েছে, এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, আল্লামা শফী দেশে-বিদেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদকে হারাল। রাষ্ট্রপতি তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
পৃথক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (আহমদ শফী) দেশে ইসলামি শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নেও ভূমিকা রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।