দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন বাস্তব রূপ নিয়েছে। ৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু আজ বৃহস্পতিবার দুই প্রান্ত ছুঁয়েছে। দেশের যোগাযোগের ইতিহাসের এই বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে জাজিরার মানুষ আতশবাজি পুড়িয়েছে। ফানুস উড়িয়েছে আকাশে।
আজ পদ্মা সেতুতে শেষ স্প্যান বসানো উপলক্ষে দিনভর জাজিরার নাওডোবা থেকে মাওয়া পর্যন্ত পদ্মা নদী ছিল নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে। সাধারণ মানুষের প্রবেশ ছিল সংরক্ষিত। প্রশাসনের এই কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যেও পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতির এই বিশাল অর্জনকে উদ্যাপন করেছে জাজিরার মানুষ। তারা আতশবাজি ও ফানুস উড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। স্থানীয় সাংসদ ইকবাল হোসেনের উদ্যোগে এ উৎসবের আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। আজ সন্ধ্যায় এ আয়োজন করা হয়। নাওডোবায় পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার পাশে সেতুর সংযোগ সড়কে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত চলে এ উৎসব।
অনুষ্ঠান চলাকালে বক্তব্য দেন জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা আবু তালেব প্রমুখ। অনুষ্ঠানে জাজিরার বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ যোগ দেয়। অনেকে নদীর তীরে জড়ো হয়।
সেই স্বপ্নের সেতুটি বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।’
শোয়েব আলী বোখারি (৩২) পেশায় মোটর মেকানিক। থাকেন ঢাকার বাড্ডায়। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরনাছিপুর গ্রামে। ২০০৮ সালে পদ্মার ভাঙনে বসতবাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ায় তিনি পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে যান। শোয়েব খেলাপাগল মানুষ। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্টের আয়োজন হলেই তিনি মাঠে ছুটে যান বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে।
দেশের জাতীয় পতাকা বুকে ধারণ করে আজ শোয়েব এসেছিলেন পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো দেখতে। ছোট একটি নৌকায় চড়ে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের কাছে অবস্থান নিয়েছিলেন।
শোয়েব আলী বলেন, ‘আমি যখন জাতীয় পতাকা নিয়ে মাঠে যাই তখন হার-জিতের শঙ্কা থাকে। কিন্তু আজ শুধুই বিজয়। জাতীয় পতাকার মতোই পদ্মার বুকে আজ দাঁড়িয়ে গেল আমাদের গর্বের পদ্মা সেতু। বিজয়ের মাসে বিশ্ববাসী এই ঐতিহাসিক ক্ষণের সাক্ষী হয়েছে। আমিও জাতীয় পতাকা বুকে ধারণ করে পদ্মায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ এক অন্য রকম বিজয়। ১৮ কোটি মানুষের বিজয়। বিশ্ববাসী বাঙালির এ বিজয় দেখেছে।’
শরীয়তপুরের আঙ্গারিয়ার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বন্ধুদের নিয়ে এসেছেন পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো দেখতে। বাড়তি নিরাপত্তার কারণে যেতে পারবেন না সেতুর কাছে, এমনটা জানার পর মন খারাপ করে একটি ট্রলার ভাড়া নিয়ে পদ্মা নদীতে নেমেছেন।
মনিরুজ্জামান বলেন, ‘২০১৭ সালে পদ্মার বুকে বসেছিল প্রথম স্প্যান। সেদিন তীরে দাঁড়িয়ে থেকে তা দেখেছি। আজও শেষ স্প্যান বসানো দেখতে এসেছি। অনেক বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সেতু নির্মাণ করতে হচ্ছে। এ কারণে এটা নিয়ে মানুষের আগ্রহ বেশি।’
পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানোকে ঘিরে এলাকার মানুষের আবেগ ও উচ্ছ্বাস সম্পর্কে মুঠোফোনে শরীয়তপুর–১ আসনের সাংসদ ইকবাল হোসেন অপু বলেন, পদ্মা নদী দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে কষ্টই দিত। এখন আমাদের কষ্টের দিন শেষ হওয়ার পালা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হওয়ায় আমরা গর্বিত। করোনার কারণে ব্যাপকভাবে উদ্যাপন করতে পারিনি। এলাকার মানুষের অনুরোধে আতশবাজি জ্বালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সি-তাজ.কম/হামিদ