মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ১৪ ডিসেম্বর হঠাৎ রাজধানীতে বিএনপির কিছু নেতা–কর্মীর অবস্থান ও বিক্ষোভ। এরপর দলের দুই ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশকে কেন্দ্র করে উল্টো অস্বস্তিতে পড়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
বিশেষ করে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে জানিয়ে আজ শনিবার কারণ দর্শানোর জবাব দেবেন—এমন খবরে এই অস্বস্তি বেড়েছে। এই অবস্থায় হাফিজ উদ্দিনকে বোঝাতে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে তৎপরতা চলছে বলে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি বলছে, এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম আলোচনা করেন। এরপর তাঁরা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। চেয়ারপারসনের ইতিবাচক মনোভাবের কথা হাফিজ উদ্দিনকে জানানো হয়েছে।
তবে হাফিজ উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, তাঁকে দেওয়া নোটিশে ১১টি বিষয়ে জবাব চাওয়া হয়েছে। তিনি প্রতিটির জবাব তৈরি করছেন। এর মধ্যে ১৩ বছর আগের এক–এগারোর ভূমিকার কথাও আছে। নোটিশের ভাষা হাফিজ উদ্দিনকে বেশ ক্ষুব্ধ করেছে। যেহেতু গণমাধ্যমকে জানিয়ে নোটিশ করা হয়েছে, তিনিও গণমাধ্যমকে জানিয়ে জবাব দেওয়াকে সমীচীন মনে করছেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার রাতে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাকে যে শোকজ করেছে, তা আমি মিডিয়াতে জেনেছি আগে। নোটিশ পেয়েছি পরদিন। আমি যে জবাব দেব, সেটা মিডিয়ার কর্মীরা জানতে পেরেছেন, কেউ কেউ যোগাযোগ করেছেন। কাল (আজ শনিবার) ১১টায় কেউ আসলে আমি কথা বলব।’
১৪ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আলোচনা সভা ছিল। এতে হাফিজ উদ্দিন ও শওকত মাহমুদও অংশ নেন। অনুষ্ঠান শেষে বিএনপির নেতা–কর্মীদের একটি দল পুরানা পল্টন মোড় ও জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাঁদের সরিয়ে দেয়। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ কেউ মনে করেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নেতা–কর্মীদের বিভ্রান্ত করে এ ধরনের বিক্ষোভ করার পেছনে হাফিজ উদ্দিন ও শওকত মাহমুদ দায়ী। এরপর ওই দিন সন্ধ্যায় দুজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিএনপি। তাতে শওকত মাহমুদকে ৭২ ঘণ্টা ও হাফিজ উদ্দিনকে ৫ দিনের সময় দেওয়া হয়। নোটিশে সই করেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র বলছে, শওকত মাহমুদ গত বুধবার রাতেই জবাব দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, জাতীয়তাবাদী দলের আদর্শের বাইরে, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে শৃঙ্খলাবিরোধী কোনো কাজে তিনি জ্ঞাতসারে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এরপরও তাঁর অজান্তে কোনো কাজে জড়িত থাকলে, তার জন্য তিনি দুঃখিত।
শওকত মাহমুদের জবাবে বিএনপি সন্তুষ্ট কি না জানতে চাইলে রুহুল কবির রিজভী গতকাল বলেন, সিদ্ধান্ত নেবেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। এ বিষয়ে তাঁর কোনো মন্তব্য নেই।
এদিকে হাফিজ উদ্দিন ও শওকত মাহমুদকে দলের কোন পর্যায় থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে, তা নিয়ে অস্পষ্টতায় আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে। তবে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কিছু বলতে চাচ্ছেন না।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমিও অস্পষ্টতার মধ্যে আছি। কোন পর্যায় থেকে এই নোটিশের সিদ্ধান্ত হলো জানি না। একজন ভাইস চেয়ারম্যানকে একজন যুগ্ম মহাসচিব তো নোটিশ পাঠাতে পারেন না।’
এই নোটিশের কারণে ক্ষুব্ধ হাফিজ উদ্দিন রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিতে পারেন বলেও খবর ছড়িয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নিইনি। চিন্তাভাবনা করছি।’