চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র (সিএইচআরসি)’র ২৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক ইতিহাসের বাতিঘরখ্যাত শ্রী চৌধুরী পূর্ণচন্দ্র দেববর্ম্মা তত্ত্বনিধি, ডিপুটি শাহ মোহাম্মদ বদিউল আলম, ড. বেণীমাধব বড়–য়া স্মরণে বার্ষিক সেমিনার গতকাল ৫ জানুয়ারি ২০২১ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর হোটেল গোল্ডেন ইন লিঃ- এ অনুষ্ঠিত হয়। প্রকৌশলী সৌমেন বড়–য়ার সভাপতিত্বে এই সেমিনারের শুরুতে ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের ২৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর গুরুত্ব তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি ইতিহাসবেত্তা সোহেল মো. ফখরুদ-দীন। প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। উদ্বোধক ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল মানবাধিকার কমিশনের পিস এ্যাম্বাসেডর লায়ন ইলিয়াছ সিরাজী। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক গবেষক ডায়মন্ড সিমেন্ট লিঃ এর ডিজিএম আবদুর রহিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন প্রবীন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল আলীম, অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী, অধ্যাপক জিতেন্দ্র লাল বড়–য়া, অধ্যাপক মোহাম্মদ নুরুল আলম, অধ্যাপক রিপন চক্রবর্তী, ডা. মীর হোসেন, অধ্যক্ষ মো. ইউনুছ কুতুবী, ব্যাংকার লায়ন সিএসকে সিদ্দিকী, প্রবীন ক্রীড়াবিদ ব্যাংকার দুলাল কান্তি বড়–য়া, সাংস্কৃতিক সংগঠক নাজমুল হক শামীম, তমাল কান্তি বড়–য়া, সজল দাশ, দেলোয়ার হোসেন মানিক, অধ্যক্ষ রতন দাশগুপ্ত, সোহেল তাজ, অমর কান্তি দত্ত, ফসিউল হক খোন্দকার, ইমরান সোহেল, জহিরউদ্দিন হিরু, ওসমান গণি প্রমূখ। সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, চট্টগ্রামের সাড়ে চার হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাসকে জাতীয় পাঠ্য-পুস্তকে অন্তভূক্ত করা এখন সময়ের দাবী। সেমিনারে বক্তারা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টির উপর দৃষ্টি আকর্ষনের দাবী জানিয়ে বলেছেন, প্রাচীন নগরী হিসেবে চট্টগ্রামকে বিশ্ববুকে তুলে ধরতে হাজার হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যগুলো সংরক্ষণ করা জরুরী। যেমন পৃথিবীর প্রথম দুর্গা পূজার স্থান মেধশ মুনির আশ্রম, সতীর পবিত্র পীঠ আদিনাথ ও চন্দ্রনাথ মন্দির, গৌতম বুদ্ধের স্মৃতিজড়িত রাম কোট বিহার, স¤্রাট অশোকের স্মৃতিজড়িত পটিয়া ফরাতড়া মন্দির, শ্রী অতিশ দিপঙ্করের স্মৃতিজড়িত পটিয়ার প-িত বিহার, মুসলমান আগমনের স্মৃতিজড়িত কর্ণফুলী নদীর মোহনায় হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রহ.) এর দেয়াং পাহাড়ের পাদদেশে সমুদ্র তোরণ সংরক্ষণ পূর্বক বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার গুরুত্ব আরোপ করেন। সেমিনারে বক্তারা আরো বলেছেন, মানব সভ্যতার বিকাশ থেকে প্রাচীন পাহাড় পর্বত সমুদ্র বেষ্টিত এলাকা চট্টগ্রামে মানব বসতি ছিল বলে ইতিহাস অনুসন্ধানে জানা যায়। হয়ত তখন এই ভূমির নাম চট্টগ্রাম ছিলো না। বর্ণ শিক্ষা আবিষ্কারের পর থেকে এই চট্টগ্রামের নাম পরিবর্তন হয়েছে ৩৮ বার। আজ চট্টগ্রাম কিংবা চিটাগাং। কখনো মগ, কখানো হিন্দু-মুসলমান বা ভূমি পুত্র দ্বারা শাসিত হয়েছে এই চট্টগ্রাম। কখনো দেশ বর্হিভূত লোক এই অঞ্চলকে শাসন করেছে, নির্যাতন করেছে এদেশের মানুষ ও সভ্যতার উপর। একাত্তরে গর্জে উঠে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন। স্বাধীন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত। এই বাণিজ্যিক রাজধানীর হাজার বছরের ঐতিহ্য মন্ডিত গৌরবময় ইতিহাসগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য সরকারী জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাসগুলো প্রকাশ প্রচারের দাবী জানান। সভার শুরুতে ২৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশাল কেক কেটে উদ্বোধন করা হয়। সভা শেষে বার্ষিক নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।
সি-তাজ. কম/এস.টি