মু.মিজান বিন তাহের,বাঁশখালী চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
দক্ষিণ চট্টগ্রামের মধ্যে বাঁশখালী উপজেলা দেশের অন্যতম নান্দনিক প্রধান পর্যটন উপজেলায় রূপান্তরিত হওয়ার পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত উপজেলা। শীতের শুরুতে অতিথি পরিযায়ী পাখিদের বিচরণে মুখরিত হয়ে উঠেছে এই বাঁশখালী ইকোপার্কটি। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই পরিযায়ী অতিথি পাখিদের বিচরণের এই দৃশ্য একনজর দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা। তাছাড়া দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু, নয়নাভিরাম দৃশ্য, কৃত্রিম লেক, পাহাড়ের উপর সুউচ্চ টাওয়ার ও কটেজ গুলো যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে এই পার্কে। শীতের আগমনকে কেন্দ্র করে বাঁশখালী উপজেলায় অবস্থিত অন্যতম এই পর্যটন স্পটে প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে হাজারো পর্যটক এসে ভিড় জমাচ্ছেন। কুয়াশার চাদরে বাঁশখালী ইকোপার্ক সহ সাগর ও বিভিন্ন নদ নদীতে ভোরের স্নিগ্ধ পরিবেশে বের হলে দেখা যায় দূর্বার ডগায় মুক্তাবিন্দুর মতো লেগে আছে ফোঁটা ফোঁটা শিশির। প্রকৃতি যখন আপন রূপে সাজে, তখন সঙ্গে নিয়ে আসে তার সব অনুষঙ্গ। পরিযায়ী পাখি এ দেশের শীতের অন্যতম অলঙ্কার। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সুদূর উত্তরের দেশ থেকে উড়ে আসা এসব অতিথির অন্যতম আশ্রয়স্থল সবুজ প্রকৃতি ও নয়নাভিরাম লেকসমৃদ্ধ বাঁশখালী ইকোপার্ক।

২০০৩ সাল থেকে এই পার্কের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয় যার মাধ্যমে এই পার্কের সৌন্দর্য্য ও সুনাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সেই থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে পর্যটকদের আগমন শুরু হয়। বিশেষ করে শীত মৌসুমে এই পার্কে পিকনিক করার জন্য দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন।

শনিবার ১০ জানুয়ারী সকালে ইকোপার্কে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শীতের পরিযায়ী অতিথি পাখিদের বিচরণে এক মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে পুরো পার্ক জুড়ে। সুবিশাল কৃত্রিম লেকের উপর কিচিরমিচির শব্দে অতিথি পাখিদের গুঞ্জন পর্যটকদের দৃষ্টি নন্দন করে তুলেছে। চট্টগ্রাম শহর থেকে আসা কয়েকজন পর্যটকদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, এই পার্কটি সতিই মনোমুগ্ধকর। পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়ানোর জন্য বেশ উপযোগী একটি স্থান। এখানে অবস্থিত দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু, সুবিশাল কৃত্রিম লেক, সুউচ্চ টাওয়ার গুলো সত্যিই অসাধারণ।

জানা যায়, এই পার্কটি শুরু থেকেই পর্যটকদের কাছে সুনাম অর্জন করে আসলেও বিগত ২০০৮ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে ইকোপার্কের বেশ কিছু স্থাপনা ও ও হাইড্রোইলেক্ট্রনিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি তছনছ হয়ে যাওয়ার পর পর্যটকের সংখ্যা কিছুটা কমে আসছিল। তবে ইকোপার্কের ভাঙা বাঁধ সংস্কারের জন্য এলজিইডি’র মাধ্যমে যথাযথ বরাদ্দ প্রদান করা হলে ওই বাঁধ নির্মাণ কাজ বর্তমানে সম্পন্ন করা হয়েছে। বাঁধ নির্মাণ করায় বামের ছড়া লেকে পূর্বের ন্যায় পানি জমায় শীত মৌসুমে পরিযায়ী অতিথি পাখির আগমন শুরু হয়েছে। এদিকে পার্কের বেশ কিছু স্থাপনা বর্তমানে জ্বরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রতিবছর ৬/৭ লক্ষ টাকা মূল্যে এ ইকোঁপার্ক লিজ প্রদান করা হলেও এসব স্থাপনা গুলো সংস্কারহীন হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। ২০২১ – ২২ অথবর্ছরে ও এই পার্কের সরকারী ভাবে লিজ দেওয়া হয়েছে ৯ লক্ষ টাকায়। দেখা যায়, পাহাড়ে উঠার সিঁড়ি, ছাতাসহ বসার স্থান ও পাহাড়ের অভ্যন্তরে বসার জন্য টেবিল আকৃতির পাকা স্থাপনা গুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে কাদা জমে গিয়ে লতাপাতায় উঠে ভরে গেছে। পর্যটকরা অভিমত প্রকাশ করেন বলেন, এসব স্থাপনা গুলো রীতিমত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হলে এবং যেসব স্থাপনা জ্বরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে তা সংস্কার করা হলে পার্কটির আরো অনেক সৌন্দর্য্য বর্ধন হবে। অন্যদিকে শীতের সময় প্রতিবছর এখানে পরিযায়ী পাখিরা আসে। শীত শেষে পুনরায় তারা আবার ফিরে যায় নিজ ভুবনে।

ইকো পার্কের গেইটের ইজারাদার সোলাইমান বাদশা বলেন, জানুয়ারী -ফেব্রুয়ারী মাস শীত কালের শেষের দিকে প্রায়,এই সময়টা সবচেয়ে বেড়ানোর সময় অপূর্ব সুযোগ। এ উপলক্ষে নানা ধরনের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে পর্যটকদের সুবিধার্থে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যটকরা প্রবেশের আগেই সহজ যাতায়তে বিনোদন প্রেমিদের উন্মুক্ত পক্ষিশালা বাঁশখালী ইকোপার্ক। ৫’শ ২০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা এই বিনোদন কেন্দ্রের বিভিন্ন ষ্পটে রয়েছে দেশি ও বিদেশি পাখি, কৃত্রিম লেক, শিশুদের জন্য দোলনা, পাখি দেখার জন্য উন্মুক্ত গ্যালারি, মিনি চিড়িয়াখানা, জলাধারের উপর ব্রিজ, কৃত্রিম গুহা, ভ্রমণের জন্য উচু নিচু পাহাড়,পযর্টকরা বসার জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বড় বড় ছাতি। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে ঘুরে সবুজ প্রকৃতি একসাথে উপভোগ করার জন্য রয়েছে দক্ষিণ চট্রগ্রামের অন্যতম জুলন্ত ব্রীজ। এই মৌসুমে পর্যটকদের আনন্দ দিতে আগে থেকে পার্ককে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। পার্কের অভ্যন্তরে দর্শনার্থীদের নির্বিঘনে আনন্দ উপভোগে করতে নিরাপত্তাকর্মীরা সজাগ রয়েছে। প্রতিনিয়ত পর্যটকরা দূর দুরান্ত থেকে ছুটে আসছে পার্কে।

বাঁশখালী ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুজ্জমান শেখ বলেন, ‘পার্কে প্রবেশের সড়কটি অত্যন্ত সরু হওয়ায় বড় ধরনের গাড়ি আসা যাওয়ায় সীমাহীন বেগ পেতে হয়। সড়কটি আরো প্রশস্থ করা অতিব জরুরী। প্রকৃতি সমৃদ্ধ এই পার্কটির এলাকা নিজ স্বচক্ষে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না এই পার্কের বিশালত্ম সম্পর্কে। তবে এই পার্কটি যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে আরো বেশী উন্নয়ন ও পর্যটন উপযোগী করা প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বনবিভাগের পক্ষ থেকে ইকোপার্কের উন্নয়নের জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে করে ভ্রমণপিপাসুরা এখানে এসে নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারেন এবং সব সময় পর্যটকরা নিরাপদে ভ্রমন করতে পারার জন্য বনবিভাগের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক পাহারা রয়েছে। এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা পরিযায়ী পাখি দেখতে আসেন। তারা যাতে নির্বিঘ্নে এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন সেজন্য বনবিভাগের পক্ষ সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। এছাড়া মানুষের মাঝে পরিযায়ী পাখির ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর আমরা পাখি মেলার আয়োজন করে থাকি।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার জানান, বাঁশখালী ইকোপার্কটি পরিযায়ী পাখিদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয় প্রতিবছর। অনেক নিরাপদ হওয়ায় প্রতি বছর এখানে পাখির সংখ্যা বাড়ছে। এখানে কেউ পরিযায়ী পাখি শিকার করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
চট্টগ্রাম শহর থেকে যেকোন গাড়ি যোগে বাঁশখালী পৌরসভার দক্ষিণ জলদী মনছুরিয়া বাজার নেমে সেখান থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা যেকোন রিকশা অথবা সিএনজি যোগে সহজেই ইকোপার্কে যাওয়া যায়। এক সময় ইকোপার্কে হোটেল রেস্তোরাঁর স্বল্পতা থাকলেও বর্তমানে অনেক বেড়েছে।