তাফসির’ হলো কোরআনের নির্ধারিত অংশ বা বিষয়ে যোগ্য মুফাসসির কর্তৃক মূলনীতির ভিত্তিতে সুন্নাহ, ফিকাহ ও প্রয়োজনীয় ইসলামি শাস্ত্রসমূহের আলোকে ব্যাখ্যা করা। যিনি তাফসির করেন, তাঁকে ‘মুফাসসির’ বলা হয়। ‘মুফাসসিরিন’ হলো এর বহুবচন। এ জন্য অগাধ ইসলামি জ্ঞানের প্রয়োজন, বিভিন্ন গ্রন্থে মুফাসসিরের জন্য ১০ থেকে ৪০টি বিষয়ের জ্ঞান থাকার শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। যেহেতু সব তাফসিরকারক আলেম তাফসিরের শর্তে মুফাসসিরের মানোত্তীর্ণ নন; তাই যাঁরা নিজে মুফাসসির না হলেও অন্য মুফাসসিরদের তাফসির পড়ে মানুষের কাছে তা পেশ করেন, তাঁদের জন্য অন্তত দুটি শর্ত প্রযোজ্য। যথা: ব্যক্তির বিশ্বস্ততা ও সূত্রের গ্রহণযোগ্যতা। অর্থাৎ ব্যক্তিকে দ্বীনদার, পরহেজগার, ন্যায়নিষ্ঠ হতে হবে, বর্ণনায় সততা থাকতে হবে এবং তিনি যেসব তাফসিরগ্রন্থ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন, সেগুলো বিশুদ্ধ ও অবিসংবাদী হতে হবে। এ ধরনের তাফসির উপস্থাপনকারীদেরও বর্তমানে মুফাসসির নামে আখ্যায়িত করা হয়। এঁরা মুফাসসিরে হাকিকি বা প্রকৃত মুফাসসির নন, বরং তাঁরা মুফাসসিরে মাজাজি বা রূপকার্থে মুফাসসির। ওয়াজে সাধারণত কোরআনের আয়াত, নবীজি (সা.)-এর হাদিস, ফিকাহ মাসায়িল ও উপদেশমূলক কাহিনি মূল প্রতিপাদ্য হওয়া উচিত। যে ওয়াজে কোরআনের বয়ান সবচেয়ে বেশি, তারপর হাদিসের বয়ান এবং গল্প-কাহিনি সবচেয়ে কম, সেই ওয়াজ বেশি উপকারী। ওয়াজে সাধারণত তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাত, ইমান ও আমল, হক্কুল্লাহ তথা আল্লাহর হক ও হক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক; হারাম ও হালাল, জান্নাত ও জাহান্নাম ইত্যাদি থাকা উচিত। তবে ওয়াজে বিতর্কিত মাসআলা–মাসায়িল, অপ্রয়োজনীয় অভিনব বিষয়, মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য, বিভেদ, ভুল-বোঝাবুঝি ও সংশয় সৃষ্টি হতে পারে—এমন কোনো বিষয় থাকা অনুচিত। দ্বীনি ইলম শিক্ষা ও দাওয়াতি কাজের জন্য সনদ বা সূত্রপরম্পরা থাকা জরুরি। সনদ ছাড়া ইসলামি প্রচারকার্য অনধিকারচর্চার শামিল। সনদ দুই প্রকার—একটি হলো সংক্ষিপ্ত, অন্যটি বিস্তারিত। প্রথমটি নিজের আমলের জন্য যথেষ্ট, দ্বিতীয়টি শিক্ষাদান ও প্রচারের জন্য অপরিহার্য। আজকাল অনেকেই তাফসির মাহফিল করেন, কিন্তু তাতে শুধু ওয়াজই করে থাকেন। ওয়াজ-নসিহত করারও কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। পর্যাপ্ত শিক্ষাগত ইলমি যোগ্যতা, অবয়ব সুরত সুন্নাত মুতাবিক হওয়া, আখলাক সিরাত নবী (সা.)-এর আদর্শে আদর্শিত হওয়া, তাকওয়ার অধিকারী মুত্তাকি হওয়া, ইখলাসওয়ালা মুখলিস হওয়া, তাওয়াক্কুল আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা থাকা, ধৈর্যশীল ও সহিষ্ণু হওয়া, কপটতামুক্ত সরলমনা হওয়া, বিনয়ী হওয়া, সুমিষ্টভাষী হওয়া, ভদ্র ও মার্জিত রুচিসম্মত হওয়া, দূরদর্শী হওয়া, সব বিষয়ে মতামত না দেওয়া বা কোনো বিষয়ে তাৎক্ষণিক মন্তব্য না করা, নিজের বিদ্যা ও পাণ্ডিত্য জাহির না করা, হিকমতের সঙ্গে কথা বলা, প্রয়োজনমতো কোরআনের আয়াত ও হাদিস উল্লেখ করা, সহিহ কাহিনি বলা, উদ্ধৃতি যেন নির্ভুল হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা, শব্দ–বাক্য ও উচ্চারণ শুদ্ধ হওয়া, তাজবিদসহ বিশুদ্ধ তিলাওয়াত করা, গ্রামারসহ আরবি পাঠ করা, কথায় ও কাজে মিল থাকা, উম্মতের ইসলাহ তথা সংশোধন ও কল্যাণকামিতার মনোভাব থাকা, ইতিবাচক কথা ও আশার বাণী শোনানো এবং নিয়ত সহিহ থাকা।
Sign in
Sign in
Recover your password.
A password will be e-mailed to you.