সকল শ্রেণীর গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বদের নিয়ে গ্রাম থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য কমিটি গঠন করতে সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন নতুন রাজনৈতিক দলটির প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী।
শুক্রবার (২৪ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে ঐক্য পার্টি আয়োজিত “প্রতিশোধের রাজনীতির গন্ডি থেকে দেশকে বেরিয়ে আনার উপায় ও দলের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া” দেশবাসীকে জানানোর জন্য মতবিনিময় সভায় তিনি এ আহবান জানান।
স্যার মুহাম্মদ আব্দুর রহীম চৌধুরী দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, দেশে হিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি চলছে। প্রধান দলগুলোর মধ্যে দেশের উন্নয়ন ভাবনার সমন্বয় নেই। ঐক্য নেই। দলগুলোর মধ্যে সংঘাত, সংঘর্ষ ও মতবিরোধ বাড়ছে। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মধ্যে যদি সৌজন্য মতবিনিময় চালু থাকতো তাহলে আমরা বাংলাদেশে আরও উত্তম রাজনৈতিক পরিবেশ পেতাম। কিন্তু হিংসাত্মক রাজনীতির কারণে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। দেশের পরিস্থিতি গৃহযুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে। যা কারো কাম্য নয়। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি
গঠনের প্রেক্ষাপট ও নীতিমালা তুলে ধরে বৈঠকে বক্তব্য রাখেন ঐক্য পার্টির ভাইস-চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানার মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার শামসুল আলম মাস্টার। তিনি বলেন, আমাদের ধর্ম, বর্ণ ও মতের পার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকারে আমাদের লক্ষ্য অভিন্ন।’
রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দেশের আন্দোলন গতিধারা বিশ্লেষণ করে মতবিনিময়ে অংশ নেন বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. নির্মল কান্তি দাশ, বিরাজ কান্তি চৌধুরী, অরুন তংচংগা, নিলুফার ইয়াছমিন সাধারণ সম্পাদক রাজীব চক্রবর্তী ও সহ-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাসেদুল আলম, কামরুন নাহার, মোহাম্মদ জাহেদুল ইসলাম প্রমূখ।
আলোচকরা বলেন, দেশে লুটপাটের রাজনীতির সৃষ্টি হয়েছে। যে যত লুটপাট করতে পারবে, সে তত সম্মানিত ব্যক্তি। যে যত বড় লুটেরা, সে তত দেশপ্রেমিক হিসেবে গলায় মালা নিয়ে ঘুরবে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে যারা দেশের জন্য ভালো কাজ করতে চাচ্ছেন, তাঁরা যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন না।’ ঐক্য পার্টি বাছাই করা দেশেপ্রেমিক জনতাকে নিয়ে দেশব্যাপী কমিটি করে দল গুছিয়ে রাষ্ট্র গঠনে এগিয়ে যাবে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘কারও দয়াদাক্ষিণ্যে নয়, জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই। সাধারণ মানুষই দেশের মালিক হবে। দেশের মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করবে—কারা, কীভাবে দেশ চালাবে। স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদের রক্তের সঙ্গে আমরা কখনোই বেইমানি করব না। আমরা শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করব।’
আলোচকরা বলেন ‘দেশের মানুষ সুশাসন চায়, দেশের মানুষ ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজব্যবস্থা চায়। যেখানে গরিব ও দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াবে সরকার। কিন্তু দু:খের বিষয় কোন সরকার গরিব ও দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ায় না। এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি ২০২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি একঝাঁক দেশ প্রেমিক মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সৈনিকদের নিয়ে অগ্রযাত্রা শুরু করে।
আলোচকরা বলেন, দেশীয় ও ভূ-রাজনৈতিক উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে আমরা কার্যকর ভূমিকা না রাখলে বাংলাদেশ অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। ব্যর্থ রাষ্ট্র হতে যাওয়া থেকে দেশকে বাঁচাতে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির ফর্মূলা বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নাই।
দলটির নেতারা আরো বলেন, ক্ষমতার ও প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি শতভাগ আন্তরিক। কথা ও কাজে যেকোনো পরিস্থিতিতে অভিন্ন থাকার পাশাপাশি শতভাগ দূর্নীতিমুক্ত থেকে সংস্কারমূলক কাজ দ্বারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি।
বড় দুই দলের মুখোমুখি অবস্থানে
সংঘাতের আশঙ্কা ঐক্য পার্টির
ক্ষমতার লোভ, অনৈতিকভাবে ক্ষমতায় যাওয়া ও ধরে রাখতে দেশের প্রধান বড় দুটি দল মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি। প্রতিষ্ঠার তিনবছরে পা রেখে দলটির নেতারা বলছেন, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে আতঙ্কে থাকা মানুষের মাঝে স্বস্তি ফেরাতে রাজনীতিবিমুখ বড় অংশের জনসাধারণকে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে হবে। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে প্রতিশোধ পরায়ণ মানসিকতা থেকে সরে আসতে হবে।
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি’র মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আব্দুর রহীম চৌধুরী।
মতবিনিময় সভায় তিনি সার্বজনীন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া ও প্রতিশোধের রাজনীতির গন্ডি থেকে দেশকে বেরিয়ে আনার উপায় তুলে ধরেন।
মতবিনিময় সভায় অভিযোগ করে বলা হয়, বিগত প্রায় ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের সবগুলো দল বলতে গেলে দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে বৈধ কিংবা অবৈধ পন্থায়, কৌশল কিংবা চক্রান্ত করে একে অন্যকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু এক পক্ষ অন্যপক্ষকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে পারেনি। এটা সম্ভবও নয়।
দলটির চেয়ারম্যান বলেন, দেশের প্রায় ৮৫ভাগ জনগণ নির্বাচনে কোন না কোন দলকে ভোট দিলেও রাজনীতিতে সক্রিয় না। কিন্তু বর্তমানে দেশে অর্থনৈতিক মন্দা ও সংকট যেভাবে বাড়ছে সেটার সীমা ছাড়িয়ে গেলে রাজনীতিবিমুখ মানুষগুলো রাস্তায় নামবে। প্রতিবাদ করবে। তাতে জনবিস্ফোরণে দীর্ঘ সময় কিংবা ২০৪১ সাল পর্যন্ত টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ঈদের পর চূড়ান্ত আন্দোলন করে সরকারকে হটানোর কথা বললেও এ পর্যন্ত ২৮টা ঈদ চলে গেছে। কিন্তু সেই ঈদ ও চূড়ান্ত আন্দোলন এর সময় এখনো আসেনি কিংবা তাদের সামর্থ্য এখনো অর্জিত হয়নি। আগামী দশবছরেও এই স্বপ্ন পূরণ হবে না। তবে মুখোমুখি অবস্থান ও সংঘাতের কারণে এই সময়ে দেশ অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে যাবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, জনপ্রিয়তা না থাকার কারণে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিলে সরকারি দলের ভরাডুবি হবে এ কারণে তারা তেমন নির্বাচন দিতে চান না। ১০ ভাগের বেশী জনসমর্থন না থাকা সত্ত্বেও বিএনপি থেকে শিখে সবক্ষেত্রে পুরোপুরি সিন্ডিকেট কায়েম করায় সরকার টিকে আছে । দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, রিজার্ভ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়াসহ বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্বপরিস্থিতির কারণে বিগত তিন মেয়াদের মতো আওয়ামীলীগ জোর করে সরকারে টিকে থাকার চেষ্টা করলে দেশ শীঘ্রই দেউলিয়া হয়ে যাবে। আফগানিস্তান কিংবা ইরাকের চেয়েও অদুর ভবিষ্যতে খারাপ হয়ে যাবে। সব কিছু নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাবে।
এসময় তিনি বড় দুই রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বিদেশীদের কাছে ধর্ণা দেয়ারও অভিযোগ করেন।
রহীম চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর যেসব দেশ নিজেদের বিরোধ মিমাংসায় বিদেশীদের দ্বারস্থ হয়েছে-তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভারতে বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও তাদের দেশের রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় টিকে থাকা কিংবা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কক্ষনো বিদেশীদের দ্বারস্থ হয় না। ভারত থেকে এই শিক্ষাটা বাংলাদেশকে নিতে হবে।
দেশীয় ও ভূ-রাজনৈতিক উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে আমরা কার্যকর ভূমিকা না রাখলে বাংলাদেশ অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে শীঘ্রই পরিণত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি।
দলটির চেয়ারম্যান বলেন, দেশকে উদ্ধারে সার্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে কোন আদর্শ দাঁড় করানো না গেলে দেশকে আসন্ন ক্ষতি থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। তার দাবি, এই আদর্শ বাস্তবায়ন ছাড়া ব্যাপক রক্তারক্তি, খুনোখুনি থেকে দেশকে বাঁচানো অসম্ভব।
সবাইকে নিজেদের গড়া সার্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি যাচাই করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ঐক্য পার্টিকে যাচাই করুন। যদি আপনার কাছে সেরা মনে না হয়ে থাকে – তাহলে আপনি একটি নতুন দল প্রতিষ্ঠা করুন সেটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের দলের চেয়ে সেরা হলে আমরা আপনার সেই দলকে সহযোগিতা করবো।
রাজনীতিকে অপছন্দ করা নাগরিকদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। এসময় দলের কার্যক্রম ও কর্মপরিধি নিয়েও কথা বলেন এর চেয়ারম্যান।
তিনি জানান, বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির কেন্দ্রীয় ফোরাম ৬৪ জেলা থেকে ৭১ জন সদস্য নিয়ে গঠন করা হবে। দল গঠনের পর চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দিয়ে তিনি শুধুমাত্র একজন সদস্য হিসেবে থাকবেন। কেন্দ্রীয় ফোরাম গঠন হলে তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের সবকিছু চলবে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি একটি নজীরবিহীন সাময়িক দল হিসেবে কার্যক্রম চালাবে। জেতার সম্ভাবনা সৃষ্টি হলেই কেবল নির্বাচন করবে। ঐক্য পার্টি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবে না। তবে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তাদের প্রতীকে ভোট করতে সহযোগিতা চাইবে। তবে কোনো জোট করবে না। আর নির্বাচনের সময় ব্যতীত দলের পক্ষ থেকে কোন মিছিল, মিটিংও হবে না।
বাংলাদেশ ঐক্য পার্টিতে পরিবারতন্ত্র, স্বেচ্ছাচারিতা থাকবে না বলেও জানান দলটির চেয়ারম্যান।
কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সব দলের ব্যক্তিদের নিয়ে করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পদ-পদবীর লোভ নেই, রাজনীতি থেকে টাকা আয়ের কোন ইচ্ছে নেই তারা থাকবেন কমিটিতে। এক্ষেত্রে প্রথমে যিনি উদ্যোগ নিবেন তিনি তার ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, কিংবা জেলার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য হবেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা
চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানার মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার শামসুল আলম মাস্টার, মুক্তিযোদ্ধা
ডা. নির্মল কান্তি দাশ, বিরাজ কান্তি চৌধুরী, অরুন তংচংগা, নিলুফার ইয়াছমিন সাধারণ সম্পাদক রাজীব চক্রবর্তী ও সহ-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাসেদুল আলম, কামরুন নাহার, মোহাম্মদ জাহেদুল ইসলাম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
সি-তাজ২৪.কম/এস.টি