বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পরকিয়ার ঘটনা ফাঁস হওয়ায় লজ্জায় পড়ে শ্রাবন্তী বড়ুয়া রিমু (২২) নামে এক গৃহবধু আত্মহত্যা করেছে। গত শনিবার (২১ আগস্ট) ভোরে উপজেলার উত্তর জলদী বড়ুয়া পাড়া (মধ্যম পাড়া) এলাকায় শ্বশুর বাড়ী হতে ওই গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন বাঁশখালী থানা পুলিশ। নিহত গৃহবধু ওই এলাকার সুগাতা নন্দন রিপুল বড়ুয়ার স্ত্রী।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে পৌরসদরস্থ ২নং ওয়ার্ডের বড়ুয়া পাড়া এলাকার কানরসন বড়ুয়ার ছেলে সুগাতা নন্দন রিপুল বড়ুয়ার সঙ্গে একই কক্সবাজার জেলার রামু বড়ুয়া পাড়া এলাকার লিটন বড়ুয়ার মেয়ে শ্রাবন্তী বড়ুয়া রিমু’র সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। সুগাতা নন্দন রিপুল বড়ুয়া দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন যাপন করলেও গত ১ বছর পূর্বে দেশে এসে চট্টগ্রাম বন্দরে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত রয়েছে। এদিকে একই এলাকার মৃত মন্টু বড়ুয়ার পুত্র বিপ্লব বড়ুয়া স্ত্রী’র বড়বোনের শ্বাশুড় বাড়ী রিপুল বড়ুয়ার বাড়ীর পার্শ্ববর্তী হওয়ায় বিপ্লব বড়ুয়া প্রায়শ তাদের বাড়ীতে যাওয়া আসা করতো। এরই প্রেক্ষিতে রিপুল বড়ুয়া কর্ম উপলক্ষে চট্টগ্রাম শহরে থাকার সুবাদে বাড়ীতে তার স্ত্রী শ্রাবন্তী বড়ুয়া রিমু’র সঙ্গে বিপ্লব বড়ুয়ার প্রেমের সূত্রপাত ঘটে। সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে তাদের এই সম্পর্ক আরো গভীর হয়ে উঠে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে বিপ্লব বড়ুয়া তার স্ত্রীর বড়বোনের স্বামী অসুস্থ রিটু বড়ুয়াকে দেখতে রাতে তাদের বাড়িতে এসে রাত্রিযাপন করে। ওই দিন রাতে অসুস্থ রিটু বড়ুয়া এবং তার স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়ার পর বিপ্লব বড়ুয়া কৌশলে ছাদের ওপর দিয়ে ওই গৃহবধুর বাড়ীতে প্রবেশ করে। এ সময় পার্শ্ববর্তী বাড়ির দীপন বড়ুয়ার স্ত্রী ববিতা বড়ুয়া মধ্যরাতে বাড়ির ছাদে ছোট ছোট কথার আওয়াজ পেয়ে ছাদে উঠে দেখতে পায় বিপ্লব বড়ুয়া ওই গৃহবধুর বাড়ির ছাদ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে। পরবর্তী তিনি বিষয়টি সকালে বাড়ির ওই গৃহবধুর শ্বাশুড়ী পুষ্পা বড়ুয়া ও বিপ্লবের স্ত্রীর বড়বোনের স্বামী রিটু বড়ুয়াকে ঘটনাটি অবহিত করেন। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর শুক্রবার গভীর রাতে বাড়ির সিলিং ফ্যানের সাথে দড়ি বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে গৃহবধু শ্রাবন্তী বড়ুয়া।
অভিযুক্ত বিপ্লবের স্ত্রীর বড় বোনের জামাই রিটু বড়ুয়া বলেন, আমি দীর্ঘ দিন যাবৎ অসুস্থ, হাঁটা চলা ও করতে পারিনা, আমার দুই ছেলে প্রবাসে, সেই কারনে আমার বাড়িতে আমি আর আমার স্ত্রী ছাড়া আর কেউ থাকেনা। আমার বাড়ীতে কোন পুরুষ মানুষ না থাকায় আমার যাবতীয় চিকিৎসা এবং দেখভাল করত বিপ্লবের। গত বৃহস্পতিবার আমার অসুখ বেশী বেড়ে গেলে তাকে আমি খবর দিয়ে বাড়িতে আসতে বলি। রাতে আমি আর আমার স্ত্রী একরুমে ঘুমাই। সে অন্য রুমে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম থেকে উঠে সকালে সে চলে যায়। আমি অসুস্থ মানুষ আর কোন কিছু আমি শুনিনি।
নিহত গৃহবধুর জ্যা এলপি বড়ুয়া জানান, ‘আমাদের বাড়ীর পার্শ্ববতী অসুস্থ রিটু বড়ুয়াকে দেখতে প্রায় সময় আসতো তার শালীর স্বামী বিপ্লব বড়ুয়া। এরই মধ্যে আমার জ্যা এর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সে। প্রায় সময় ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে এবং ফোনে তাদের মধ্যে আলাপ হতো।’
পার্শ্ববর্তী ববিতা বড়ুয়া বলেন, ‘বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আমি বাড়ির ছাদে গুনগুন কথার আওয়াজ শুনে ছাদে গিয়ে দেখি বিপ্লব আমাদের বাড়ির ছাদে বেয়ে রিপুল বড়ুয়ার বাড়ির ছাদে প্রবেশ করছে। আর একটু কাছে গিয়ে দেখতে পাই রিপুল বড়ুয়ার স্ত্রী শ্রাবন্তী বড়ুয়া তাকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে। পরদিন সকাল বেলা বিষয়টি শ্রাবন্তীর স্বাশুড়ী পুষ্পা বড়ুয়া ও বিপ্লব বড়ুয়ার স্ত্রীর বড়বোনের স্বামী রিটু বড়ুয়াকে অবহিত করি। পরবর্তীতে এ বিষয়ে দুজনকেই সতর্ক করার পর পরদিন শুক্রবার রাতে আত্মহত্যা করে শ্রাবন্তী।’
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর তপন বড়ুয়া বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে প্রেমের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে ওই গৃহবধু।’
এ ব্যাপারে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সফিউল কবীর বলেন, ‘উত্তর জলদী বড়ুয়া পাড়া এলাকায় গৃহবধুর আত্মহত্যার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে।’ তদন্ত চলমান রয়েছে।