G-VV5KW25M6F
Take a fresh look at your lifestyle.

‘হঠাৎ’ আলোচনায় বিএসসি-সুজন, আছেন ছালামও!

0

 

।। মুহাম্মদ জুলফিকার হোসেন ।।

সাবেক মেয়রপুত্র নাকি বর্তমান মেয়র, সমীকরণ দুই নেতায় আটকে ছিল অনেকদিন। দিন গড়িয়ে দুয়ারে এখন নির্বাচন। প্রার্থিতাও আটকে নেই দুজনে, মনোনয়ন দৌড়ে এখন সাত হেভিওয়েট!

প্রসঙ্গ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন। প্রার্থিতার এ যোগ-বিয়োগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। সদ্যসমাপ্ত ঢাকার দুই সিটির মতো এই নির্বাচনেও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে ইসি।

নগরীর সর্বত্র এখন নির্বাচনি আমেজ। চলছে আলোচনা-সমালোচনা। দল ও প্রার্থী নিয়ে বিশ্লেষণ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন এবং বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়েই কৌতূহল সবচেয়ে বেশি।

সোমবার (১০ ফেব্রয়ারি) আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে আওয়ামী লীগের মেয়র ও কাউন্সিলর পদের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে মেয়র পদে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন নগর আওয়ামী লীগের তিন শীর্ষ নেতা, সহসভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসি, খোরশেদ আলম সুজন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। এছাড়া নুরুল ইসলাম বিএসসির বড় ছেলে মুজিবুর রহমানও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এবার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন সাতজন। শিক্ষা উপমন্ত্রী ও দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এবং চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।
নাছির-নওফেল সমীকরণ

সার্বিক বিবেচনায় এখন পর্যন্ত বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন অন্যদের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে আছেন। ক্লিন ও গ্রিন সিটির প্রতিশ্রুতিতে নির্বাচিত মেয়র নাছির নগরের পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছেন। এছাড়া নগরকে বিলবোর্ডমুক্ত করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে সমালোচনাও কম হয়নি। তার মেয়াদে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন বা ফুটপাত হকারমু্ক্ত করার ক্ষেত্রে চসিককে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এছাড়া তার মেয়াদের শুরুর দিকে নেওয়া হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও নগরবাসীর মনে আছে ক্ষোভ। যদিও সেসময় প্রাক্তন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর শক্ত অবস্থানে উদ্যোগটি হালে পানি পায়নি।

নগরে সাংগঠনিক অবস্থান ও মেয়াদকালে সাফল্য বিবেচনায় আ জ ম নাছির অনেকখানি এগিয়ে থাকলেও তার মনোনয়নে বিরোধীতাও কম নেই। নগর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা তার পরিবর্তে মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে তাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা না দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় আসছে। এর বাইরে নাছির মেয়র থাকাকালে জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুকূলে কয়েক হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে চসিককে অংশীদার না করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রে মেয়র নাছির বিরোধী শিবিরের শক্ত ভূমিকা আছে বলে মনে করেন চট্টগ্রামের রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে দলের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড ও নগর নেতৃত্বের একটি বড় অংশ চাইছে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের প্রার্থিতা। সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ও বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল অবশ্য এরমধ্যেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নিজের অনাগ্রহের কথা জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে। আবার নেত্রী চাইলে নির্বাচন করবেন, একইসঙ্গে চসিক মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে চমক থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।

মূলত সদ্যসমাপ্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী পরিবর্তনের পর থেকেই নওফেলকে নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। ঢাকা দক্ষিণে মেয়র সাঈদ খোকনের জায়গায় এবার ঢাকা-১০ আসনের সদ্যপ্রাক্তন সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। নির্বাচনে ফজলে নূর তাপস বড় ব্যবধানে জয়ীও হন। এরপর থেকেই নগর আওয়ামী লীগে নওফেলের অনুসারীদের মধ্যে তাকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে দেখতে জোর দাবি ওঠে। কেন্দ্রীয় পর্যায়েও বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পায়। নওফেল সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেয়র নির্বাচনে নিজের অনাগ্রহের কথা বললেও, প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়েও দেননি।
আলোচনায় ৩ হেভিওয়েট

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের ভাষ্যে, এবার মেয়র নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে বড় চমক আসতে পারে। আ জ ম নাছির বা মহিবুল হাসানের বাইরে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে।

এক্ষেত্রে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ভালোভাবেই বিবেচনায় আছেন। বেশ কয়েকবার মনোনয়নের সংক্ষিপ্ত তালিকায় নাম থাকলেও শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হওয়া হয়নি সুজনের। তারপরও দলের সাংগঠনিক কাজে তার সরব উপস্থিতি সবসময় নজর কেড়েছে। অধুনালুপ্ত জাতীয় ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি জিয়া ও এরশাদবিরোধী আন্দোলন কিংবা নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের জন্য কাজ করা, সবক্ষেত্রে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তার সামাজিক সংগঠন নাগরিক উদ্যোগের কর্মকাণ্ড বেশ আলোচিত হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে খোরশেদ আলম সুজন সি-তাজ’কে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দল আমাকে যোগ্য মনে করে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিলে আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’

কেন্দ্র থেকে মনোনয়নের বিষয়ে সবুজ সংকেত পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘না। এখনও কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তেমন কিছু বলা হয়নি।’

নির্বাচনের প্রস্ততি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হয়। আমিও প্রস্তুত আছি।’

সোমবার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনে আলোচনায় উঠে এসেছেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এই রাজনীতিক, শিল্পপতি ও কলামিস্ট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি। আগেরবার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী করা হলেও এখন সে দায়িত্বেও নেই তিনি। তবে দলের কেন্দ্রীয় ও নগর পর্যায়ে তার রয়েছে শক্ত অবস্থান।

জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বিএসসি সি-তাজ‘কে বলেন, ‘মনোনয়ন ফরম নিয়েছি। তবে এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাইছি না। সময় আসলে দেখা যাবে।’

মেয়র পদে মনোনয়ন দৌড়ে আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তার মেয়াদেই চট্টগ্রামে সবচেয়ে বড় বাজেটের (সবমিলিয়ে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা) ‍উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে চউক (সিডিএ)। জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প আলোর মুখ দেখে তার সময়কালেই। নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে তার সময়কালেই নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার। এছাড়া বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নির্মাণ, সংস্কার-সম্প্রসারণ, নগরীর বিভিন্নস্থানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে পুরো মেয়াদজুড়ে নগরে আলোচনায় ছিলেন তিনি। সর্বশেষ চউক চেয়ারম্যান হিসেবে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তার মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি সামনে চলে আসে। সম্প্রতি নগরীর বিভিন্নস্থানে তার মেয়র প্রার্থিতার পোস্টারিংয়ের পর আরেকবার আলোচনায় উঠে আসে তার নাম।

মনোনয়ন দৌড়ে আরো যারা

অন্যদের মধ্যে দলের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীও। এছাড়া বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন। এরমধ্যে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমান ও চউক চেয়ার‌ম্যান আবদুচ ছালামের ছোট ভাই নুরুল ইসলামের নাম আলোচনায় রয়েছে। নুরুল ইসলাম ব্যবসায়ের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন।

তবে সব প্রার্থীই মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভার কেন্দ্রের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। সবার অপেক্ষা তাই কেন্দ্রের সবুজ সংকেতে

সি-তাজ২৪.কম/এস.টি

Leave A Reply

Your email address will not be published.