মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের,বাঁশখালী প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারায় নির্মিতব্য কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প কেন্দ্রে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে গুলিতে ৫ শ্রমিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক শ্রমিক। শনিবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ১০ টার দিকে সংঘটিত এ ঘটনায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহতদের লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। আহতদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রমজান মাসে চাকুরীর সময় সীমা কমানোর দাবিতে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের। এরই জের ধরে শ্রমিকরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলে পুলিশ শ্রমিক সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় ৫ শ্রমিক। আহত হয় আরও অর্ধ শতাধিক শ্রমিক। নিহত হলেন, বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নের মৃত মাওলানা আবু ছিদ্দিকের পুত্র আহমদ রেজা মীরহান (১৮), কুমিল্লার চান্দপুর উপজেলার নজরুল ইসলামের পুত্র শুভ (২৪), চুয়াডাঙ্গার জীবন নগর থানার অলি উল্লাহ পুত্র রণি (২২), কিশোরগঞ্জের মিঠামাইন উপজেলার ফালু মিয়ার পুত্র মাহামুদুল হক রাহাত (২২) ও রায়হান (২৫)। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার পর বিক্ষুদ্ধ জনতা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করেছে বলে জানা গেছে।
বিক্ষোভকারী জেনজং কোম্পানীর ওয়েলডার সোহাগ হোসেন ও রুবেল জানান, আমরা কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে দৈনিক ১০ ঘন্টা হিসেবে চাকুরী করি। পবিত্র রমজান উপলক্ষে আমরা ২ ঘন্টা নামাজ এবং ইফতারের জন্য বিরতি চাইলে, তারা আমাদের দাবীকে কোন ধরনের কর্ণপাত না করায় আজকে সকল শ্রমিক মিলে দাবি আদায়ে আমরা আন্দোলন করি। তার মধ্যেই কোন ইস্যু ছাড়াই পুলিশ আমাদের ওপর গুলি চালায়।
নিহত শ্রমিক গন্ডামারা এলাকার আহমদ রেজার পরিবারের সদস্যরা জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পুলিশ শ্রমিক সংঘর্ষের ঘটনায় নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে। গুলিতে অনেক শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছে। ৫ শ্রমিকের লাশ পাওয়া গেলেও নিহত আরও অনেক শ্রমিকের লাশ প্রকল্প এলাকা থেকে বের করতে দেয়নি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। এদিকে দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মুমিনুর রহমান ও পুলিশ সুপার এস.এম. রশিদুল হকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেন এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস.এম. রশিদুল হক বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শ্রমিকরা যে দাবি গুলো জানিয়েছেন তার মধ্যে কয়েকটি দাবি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছিলেন। তবে রমজান মাসে চাকুরীর সময় সীমা কমানোর দাবিতে শ্রমিকরা বিশেষ করে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠায় তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় শ্রমিকরা। এ সময় পুলিশসহ বেশ কিছু শ্রমিক আহত হয়েছে, নিহত হয়েছে ৫ শ্রমিক। এ অনাকাঙ্খিত ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের পরিবার প্রতি ৩ লক্ষ টাকা এবং আহতদেরকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মুমিনুর রহমান বলেন, ‘গন্ডামারায় নির্মিতব্য এ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আমাদের দেশের অন্যতম একটি সম্পদ। স্থানীয় কিছু উন্নয়ন বিদ্বেষী কুচক্রী মহলের উস্কানিতে শ্রমিকরা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা- বিরোধী ওই চক্রটির সদস্যদের চিিহ্নত করে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ঘটনাটি তদন্তে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪ সদস্য ও ৩ সদস্য বিশিষ্ট ২টি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, এই বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে বিগত ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল পুলিশের সাথে সংঘর্ষে নিহত হয়েছিলেন ৪ বিক্ষোভকারী। এর কিছুদিন পরও আবারও সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন আরও এক বিক্ষোভকারী।
সি-তাজ২৪.কম/এস.টি