মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের,বাঁশখালী চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা এস আলমের কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিকদের নৈতিক দাবীকে উপেক্ষা করে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। ইফতারের জন্য ১ ঘন্টা বিরতি দেওয়া, শুক্রবার জুমার নামাযের জন্য বিরতী দেওয়া, কর্মঘন্টা কমিয়ে আনা, কাজে নিরাপত্তা নিশ্চিৎ করা, খাওয়া-দাওয়ার সুব্যবস্থা সহ কিছু নৈতিক দাবী ছিল শ্রমিকদের। তাদের দাবী মেনে নিবে দূরের কথা উল্টো চাকরি থেকে ছাঁটাই করা ও বেতন কেটে নেওয়ার হুমকী দেয়। পুলিশ-শ্রমিকের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে নিরীহ, নিরস্ত্র শ্রমিকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালা পুলিশ। এতে নিহত হয় ৫ জন শ্রমিক। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। শনিবারের ঘটনায় পুলিশ ও কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প কেন্দ্রের সমন্বয়ক ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে দুটি মামলা হয়েছে। এদিকে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি এবং জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের সাথে কথা বলে বিভিন্ন তথ্য ও আলামত সংগ্রহে কাজ পরিচালনা করছেন। অন্যদিকে, গতকাল ১৭ এপ্রিল শনিবার গন্ডামারা কয়লা বিদ্যুত প্রকল্পে শ্রমিকদের দাবী দাওয়া নিয়ে আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত ৫ জনের একজন পবিত্র কোরআনের হাফেজ। বাঁশখালীর পুর্ব বড়ঘোনা ৮নং ওয়ার্ড এলাকার হামিদ উল্লাহ মিয়াজীর বাড়ির মৃত মাওলানা আবু ছিদ্দিকের ছেলে মাহমুদ রেজা (মিনহান) মাদরাসা ছাত্র। এবার তার দাখিল পরীক্ষা দেয়ারও কথা ছিল। করোনায় মাদরাসা বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি মসজিদে সীমিত মুসল্লির কারণে তার খতমে তারাবিও বন্ধ। এমতাবস্থায় পরিবারের অভাব অনটনের তাগিদে কয়লা প্রকল্পে শ্রমিকের কাজ নেন হাফেজ মাহমুদ রেজা মিনহান। কাজ যোগ দেয়ার এক মাসও পুর্ণ হয়নি এখনো। নিহত মিনহানের বড় ভাই মাওলানা ইয়ার মোহাম্মদ ওমান প্রবাসী। মাদরাসা বন্ধ এবং মসজিদে তারাবি বন্ধ উপলক্ষে বেকার বসে না থেকে কাজে যোগ দিয়েছিল সে। কিন্তু অন্য চার জনের সাথে ঘাতক বুলেট এই কোরআনে হাফেজের প্রাণ কেড়ে নেন। তার এমন অনাকাংখিত মৃত্যু মেনে নিতে পারছেনা এলাকাবাসী। ১৯ বছর বয়সি এই হাফেজ কোরআনসহ গন্ডামারা ট্রাজেডির ৫ খুনের সুষ্ট তদন্ত ও বিচার হোক এমনটাই প্রত্যাশা নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসীর। এদিকে মিনহান এর লাশ ময়না তদন্ত শেষে রবিবার বিকাল ৫ টায় হাজী আব্দুস ছালাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
নিহতের বড় ভাই আহমদ রেজা খান বলেন, সংসারের অভাব মেটানোর জন্য চাকুরীতে যায় আমার ছোট ভাই। কিন্তু তাকে লাশ হয়ে ফিরতে হল। এই কষ্ট মেনে নেওয়া যায় না।আমরা এই হত্যাকান্ডের সুষ্ট বিচার দাবী করছি। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। অপর দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কমে গেছে সাধারণ মানুষের আনাগোনা। চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয় এলাকাবাসীদের মাঝে।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল কবির বলেন, পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদানের ঘটনায় বাঁশখালী থানার এসআই মো. কামরুজ্জামান বাদী হয়ে গতকাল রাতে মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় দুই হাজার থেকে আড়াই হাজারজনকে আসামি করা হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা, গাড়ি পোড়ানোসহ ২৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের চিফ কো–অর্ডিনেটর ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১ হাজার ৪০ থেকে ১০৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
এদিকে পুলিশ তদন্ত টিমের প্রধান চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুুলিশ সুপার অতিরিক্ত (ক্রাইম) মোঃ জাকির হোসেন দুপুরে চাঁটগার তাজ কে বলেন,পুলিশের মামলায় অজ্ঞাত তিন হাজার জনকে এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমন্বয়ক ফারুক আহমেদ এর করা মামলায় ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০৪০-১০৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে দুই মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশ শান্ত রয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে নির্মাণকাজও বন্ধ রয়েছে।