নতুনভাবে ৫ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর আজ বুধবার (১৫ এপ্রিল) সকালে জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসন জরুরি বৈঠক শেষে সন্ধ্যা ৬টাথেকে পুরো সাতকানিয়া লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
নতুনভাবে করোন শনাক্ত হওয়া সবার বাড়ি উপজেলার পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের ইছামতি আলীনগর এলাকায়। তারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে প্রথম মারা যাওয়া ব্যবসায়ীর পরিবারের সদস্য ও তাদের সংস্পর্শে আসা এলাকাবাসী।
গত রবিবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্য, তাকে বহনকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক, লাশ ধোয়া ও দাফন-কাফনের কাজে সম্পৃক্তসহ তাদের সংস্পর্শে আসা ১৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অভ ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) পাঠানো হয়।
নমুনা পরীক্ষা শেষে বিআইটিআইডি হতে রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর আজ বুধবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ ওসমানী।
সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র মতে, জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে সাতকানিয়ার পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের ইছামতি আলী নগরের এক ব্যবসায়ী মারা যান। ওই দিন রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বিআইটিআইডিতে পাঠানো হয়।
পরে গত শনিবার বিআইটিআইডি হতে দেয়া নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে তার শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসন ওইদিন রাতেই পশ্চিম ঢেমশার ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড ও মারা যাওয়া ব্যক্তি এবং তার পরিবারের সংস্পর্শে আসা লোকদের চিহ্নিত করে ৪০০টি পরিবারকে লকডাউন করেন।
এদিকে, গত রবিবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয়, লাশ ধোয়া ও দাফনের কাজে নিয়োজিত এবং তাদের সংস্পর্শে আসা ১৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বিআইটিআইডিতে পাঠানো হয়।
নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে ১৬ জনের মধ্যে ৫ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়।
নতুনভাবে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের বয়স যথাক্রমে ৩১, ৩০, ২৭, ২৭ ও ২৫।
একই এলাকার ৫ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে। ফলে আজ সকালে জরুরি বৈঠক করে সন্ধ্যার পর থেকে পুরো সাতকানিয়া লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ ওসমানী জানান, ইছামতি আলীনগরে মারা যাওয়া ব্যক্তির শরীরে করোনার সংক্রমণ হওয়ার বিষয়টি মৃত্যুর আগে কেউ জানতেন না। ফলে অসুস্থ হওয়ার পর পরিবারের পক্ষ থেকে তার সেবা যত্ন থেকে শুরু করে হাসপাতালে নেওয়া, মৃত্যুর পর লাশ ধোয়া এমনকি জানাযা পর্যন্ত স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করেছেন।
মৃত্যুর দিন চমেক হাসপাতালে সংগ্রহকৃত নমুনা পরীক্ষা শেষে বিআইটিআইডি হতে দেয়া রিপোর্টে তার করোনা শনাক্ত হয়।
তিনি বলেন, ‘করোনায় তার মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা ৪০০ পরিবারকে লকডাউন করি। রবিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে এলাকায় গিয়ে পরিবারের সদস্যসহ ১৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠাই। নমুনা পরীক্ষা শেষে বিআইটিআইডি হতে পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী ৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।’
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর এ আলম বলেন, ‘ইছামতি আলীনগরে মারা যাওয়া ব্যক্তির করোনা শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়ার পরপর আমরা পুরো ১টি ওয়ার্ডসহ ৪০০টি পরিবার লকডাউন করেছি। মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারের ১ সদস্যসহ নতুনভাবে ৫ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক ডেকেছি। বৈঠকে আজ সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে পুরো সাতকানিয়া লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়। আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।