মুহা. মিজান বিন তাহের,বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কাঁকরোল ও শশার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাঁশখালীতে যে বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষ করা হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয়েছে কাঁকরোল ও শশা। বাঁশখালীতে কাঁকরোল ও শশা চাষে হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে। চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় খুশি উপজেলার নাপোড়া, শীলকূপ, সাধনপুর, কালীপুর, চাম্বল, পুইছড়ি, জঙ্গল জলদী, প্রেমবাজার সহ ছয়টি ইউনিয়নের বেশকয়েকটি গ্রামের দুই হাজারের বেশি কৃষক। এসব কাঁকরোল ও শশা বাঁশখালীর স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিঠানোর পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহরেও সরবরাহ করা হয়। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এসব কাঁকরোল ও শশা চাষিরা। মৌসুমের শুরুতেই কাঁকরোল ও শশার বাম্পার ফলন হয়েছে বাঁশখালীতে। এখানে প্রতিদিন উৎপাদিত প্রায় ৪০-৫০ মেট্রিক টন কাঁকরোল বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। শুরুতে কাঁকরোলের কেজি ২০ থেকে ১৫০ টাকা হলেও এখন পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।
বাঁশখালীর প্রায় অর্ধ শতাধিক স্থান থেকে কাঁকরোল ও শশা চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তে সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। কাঁকরোল ও শশার বাম্পার ফলনে চাষিদের মাঝে উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। বাঁশখালীর পাহাড়ি সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে এখন বিক্রির জন্য রাখা কাঁকরোল ও শশার স্তূপ চোখে পড়ে। উপজেলার পৌরসভার দক্ষিন জলদী, পূর্ব শীলকূপ ও শেখেরখীল পূর্ব নাপোড়া ও প্ুঁইছুড়ি ইউনিয়নের পাহাড়ী ও সমতল বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রত্যেক চাষির জমিতে প্রচুর কাঁকরোল ও শশা । ছড়ায় ছড়ায় ঝুলছে কাঁকরোল । অন্যদিকে শশা যেন চোখের পড়ার মত সুন্দর করে প্রতি গাছেই। চাষীরা জানান, বাঁশখালী পৌরসভা জলদি, চাম্বল, শীলকূপ, শেখেরখীল, সাধনপুর, বৈলছড়ি, পুঁইছড়ি, পুকুরিয়া ও কালীপুর ইউনিয়নে কাঁকরোলের বাম্পার ফলন হয়েছে। নাপোড়া ও শীলকূপ এলাকার ব্যবসায়ী মোঃ সেলিম, লেদু, সোহেল ,রঞ্জিত কান্তি দাশ, মিহীর রায় বলেন, আমরা জমিতে সকালে এবং বিকেলে কাঁকরোল ও শশা ছিড়ে বারে বারে বাজারে বিক্রি করি। অনেক পাইকারী ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ ট্রাকে ট্রাকে এসব শশা ও কাঁকরোল ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রায় রাত ১১/১২টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে এ সব সবজি ক্রয় করে নিয়ে যায়। আবার শুরুতেই অনেক স্থানীয় ব্যবসায়ী কাঁকরোল কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কিনে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছে। এখন কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কিনে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করি। শশা প্রথমে ৪০-৫০ টাকায় ক্রয় করেছি। বর্তমানে ৩০-৩৫ টাকা করে বিক্রি করছি শশা। তাদের মতে প্রচুর পরিমাণ সবজি উৎপাদন করেও আশানুরূপ দাম পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান বাঁশখালীর নাপোড়া, শীলকূপ, সাধনপুর, কালীপুর, চাম্বল, টাইমবাজার, পুইছুড়ি প্রেমবাজার সহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রেতার।
তবে বাঁশখালীতে উৎপাদিত সবজি চট্টগ্রামের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। কারন এখানকার সবজি কোন ধরনের রাসায়নিক বিষ মিশানো না হওয়ায় ক্রেতারা সহজেই এই সবজির প্রতি সহজে আকৃষ্ট থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারন পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাঁশখালী এসে পাইকারী দামে ক্রয় করে ট্রাকে ট্রাকে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানান চাষীরা। বাঁশখালীর নাপোড়া বাজার মীরা পাড়া এলাকার কাকরল চাষী শাহেদ, উত্তর জলদীর নাছির, নাজিম ও সাধনপুর চারা বটতল এলাকার কামাল বলেন, পাইকারী ক্রেতারা কেজি হিসেবে না নিয়ে প্রতি ভার হিসেবে কিনে থাকেন। ৭ শ টাকা থেকে শুরু হাজার ১২ শ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। এ বছর চলতি মৌসুমে যেভাবে কাঁকরোল উৎপাদন হয়েছে সেভাবে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি না হলে সবজি আরো বেশী উৎপাদন হবে। যা আমরা বাঁশখালীর সাধারন চাষীদের জন্য অতান্ত লাভজনক হতে সাহায্য করবে। এই চলতি মৌসুমে কাঁকারোল-শশা ছাড়াও বেগুন, ঢেড়শ, ফল, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা, বরবটি, তীত করলা সহ তরমুজ, বাঙ্গী, লিচু, আম, জাম, কাটালের বর্তমানে বাজারে চাহিদা অনুসারে পাওয়া যাচ্ছে।
বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু ছালেক বলেন, ‘বাঁশখালীতে এবার সাড়ে ১১ শ হেক্টর জমিতে কাঁকরোল চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু তা বেড়ে বাম্পার ফলন হয়েছে। শীলকূপ ইউনিয়নে সব চেয়ে বেশী কাঁকরোল চাষ হয়। এবার ও শীলকূপে বেশী চাষ হয়েছে। কোনো ক্ষেতেই রোগবালাই আক্রমণ করেনি। রীতিমতো বাঁশখালীতে কাঁকরোল উৎসব চলছে। পাশাপাশি শশার ও বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর ২৮০ হেক্টর জমিতে ফলনের লক্ষমাত্রা থাকলে আমার মনে হচ্ছে তা আরো বাড়বে। তা ছাড়া এই উপজেলায় সকল ধরণের শাক-সবজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির সবজি ব্যাপক হারে উৎপাদন হয়েছে বলে তিনি জানান ।