সাংবাদিকতা জগতে হেলাল হুমায়ুন বহুল পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি নাম। অত্যন্ত সহজ-সরল, সদা হাস্যোজ্জ্বল, পরোপকারী ও নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিত্ব মরহুম হেলাল হুমায়ুন সৃজনশীল ও পেশাদার সাংবাদিকতায় অতুলনীয় দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন।অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ হিসেবে তাঁকে চেনেন সবাই। দৃঢ় মনোবল আর প্রত্যয়ের নিষ্ঠা সাধনায় এ পেশায় তিনি দীর্ঘ প্রায় তিন দশক কাটিয়ে দিলেও তাঁর চরিত্রে আরো অনেক গুণের সমাহার ঘটেছিল। সৎ ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন
প্রথিতযশা সাংবাদিক ছাড়াও তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক, সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী ও মানবাধিকার কর্মী। সাংবাদিকতা পেশা অবলম্বন করলেও নিজের মধ্যে সাহিত্য রুচি জিইয়ে রেখেছিলেন আজীবন। ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সবার কাছে তাঁর গ্রহনযোগ্যতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁর উপস্থিতি যেকোন সভা-সমিতিতে প্রাণের সঞ্চার করতো। সাদা মনের অসাধারন মানুষ হুমায়ুন ভাই চালচলন, বেশভূষায় ছিলেন পরিপাটি ও কেতাদুরস্থ। কথাবার্তায় চৌকস এবং সবসময় হাসিখুশি থাকতেন। অত্যন্ত সদালাপী, পরোপকারী, বন্ধুবৎসল বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই মনীষীর সবদিকে যেতে চাই না। আমার পক্ষে তাঁর বৈচিত্র্যময় ও সুদীর্ঘ কর্মপ্রয়াসের মধ্যে প্রবেশ করাও সম্ভব নয়। অভিভাবকতুল্য এই মানুষটির কাছ থেকে অনেক কিছুই শেখার সুযোগ হয়েছে। তাঁর দুরন্ত, তারুণ্যভরা চলাফেরা ও কাজকর্ম আমাকে মুগ্ধ করেছে বারবার। অনেক সময় সাহস জুগিয়েছে। আজকের পরিসরে স্মৃতির নোটবুক থেকে সামান্য স্মৃতিচারণের প্রয়াস মাত্র।
সাংবাদিক হেলাল হুমায়ুনের সাথে আমার সাক্ষাৎ পরিচয় ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ সন্ধ্যা সাতটায় হলেও আমার মাতৃকুলের দিক দিয়ে পারিবারিক সম্পর্ক ১৯৪০ সালের দিকে। আমার মাতৃবংশীয় লোহাগাড়া উপজেলার পশ্চিম কলাউজান খতিব বাড়ির আলেমগণ বংশ পরম্পরায় রেঙ্গুনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ছুরতিয়া মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘ ১৩০ বৎসর। ঐ মসজিদটি ছিল তদানীন্তন সময়ে রেঙ্গুনের প্রবাসী বাঙালী মুসলমানদের ধর্মীয় কর্মকান্ডের কেন্দ্রস্থল। ১৯৬৩ সালে বার্মায় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরুর আগে ঐ মসজিদে আমিরে শরীয়তখ্যাত আমার নানা মুফতি মুহাম্মদ এয়াকুব (রাহঃ)’র পর আমার দুই মামা যথাক্রমে মুফতি মাওলানা জামাল উদ্দিন ইউছুফ খতিবী (রাহঃ) ও হাফিজুল হাদিস মাওলানা মাহমুদুল হক খতিবী (রাহঃ) (মরহুম প্রফেসর ড. আনওয়ারুল হক খতিবীর আব্বা) খতীবের দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিক হেলাল হুমায়ুন সাহেবের মরহুম আব্বা হেকিম মোহাম্মদ ইসমাঈল হিলালী ছিলেন আমার মামা মুফতি জামাল উদ্দিন ইউছুফ খতিবীর ঘনিষ্টবন্ধু। রেঙ্গুনে থাকতেন একসাথে। উভয় পরিবার ও সুধীমহলে পরিচিত ছিলেন পরস্পর ধর্মের ভাই হিসেবে। বয়স-বুদ্ধি বাড়ার সাথে সাথে মামা এবং মা-খালাদের আলাপচারিতায় প্রসঙ্গক্রমে কথা উঠলে “বদ্দা ইসমাঈল হেলালী” -এই সম্বোধনে কথা বলতে দেখতাম। ১৯৭৭ সালে চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর দেখতাম, মাদ্রাসার বার্ষিক সভা ও মাহফিলে সীরতুন্নবী (সাঃ)-এ খ্যাতিমান উর্দু শায়ের হেকিম ইসমাঈল হিলালী’র স্বরচিত নাতে রাসুল ছিল অন্যতম আকর্ষণ। ১৯ দিনব্যাপী সীরতুন্নবী (সাঃ) মাহফিল উপলক্ষে হেকিম ইসমাঈল হিলালী (রাহঃ)’কে দেখতাম আমার ছোট মামা চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রবাদপ্রতিম উস্তাদ মাওলানা কামাল উদ্দিন মুছা খতিবী (রাহঃ) এর রুমে (কুতুবখানা) অবস্থান করতে। অথচ মাদ্রাসা থেকে মাত্র তিন/চারশত গজ দূরে চুনতির ঐতিহ্যবাহী ছিদ্দিকী পরিবার ছিল তাঁর শ্বশুরালয়। অবশ্য মাঝেমধ্যে চুনতির মরহুম পীর সাহেব শাহ মাওলানা হাবিব আহমদ (রাহঃ) এর মেহমানখানায়ও অবস্থান করতেন। যে ক’দিন মামার রুমে অবস্থান করতেন প্রচন্ড ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মামাকে দেখতাম বড় ভাইয়ের বন্ধু হিসেবে পরম শ্রদ্ধাভরে হেকিম ইসমাঈল হিলালী (রাহঃ)’কে কথায় কথায় ‘বদ্দা’ সম্বোধন করে মেহমানদারি করতে। খুব সম্ভব, ১৯৭৮ সালের কথা। হেকিম ইসমাঈল হিলালী (রাহঃ) আমার পরিচয় জানতে চাইলে মামা সরাসরি বলেছিলেন রফিকা’র ছেলে ছোটটা। সাথে সাথে আমার ছোট বোনের ছোট ছেলে বলে বুকে জড়িয়ে ধরে পকেট থেকে পাঁচ টাকার নোট বের করে দেন। ১০ পয়সা দিয়ে আইসক্রিম পাওয়ার ঐ সময়ে পাঁচ টাকার কতো মূল্য ছিল তা সহজেই অনুমেয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের পাশাপাশি ১৯৯৪ সালের শুরুর দিকে দৈনিক পূর্বকোণ, আজাদী, নয়াবাংলা ও মাসিক দ্বীন দুনিয়ায় লেখালেখি শুরু করি। আস্তে আস্তে পরিচয় হতে থাকি চট্টগ্রামের সাংবাদিকতা জগত সম্পর্কে। সাতকানিয়ার ছেলে পরিচয় পেয়ে একদিন হুমায়ুন ভাই খবর পাঠালেন, সুযোগ মতো তাঁর অফিস কক্ষে চা খেতে আসতে। শায়ের ইসমাঈল হিলালী (রাহঃ)’র একমাত্র সন্তান ছাড়াও একজন কৃতি সাংবাদিক ও সাবেক ছাত্রনেতা হিসেবে হেলাল হুমায়ুন সাহেবের নাম শুনেছি চুনতি থাকাবস্থায়। তাছাড়া তাঁর কয়েকজন মামাতো ভাই ছিল আমার সহপাঠী। আন্দরকিল্লা হোটেল ইন্টারন্যাশনালস্থ তাঁর অফিস কক্ষে প্রথম সাক্ষাতের দিন পূর্বকোণসহ বিভিন্ন দৈনিক ও সাময়িকীতে নিয়মিত লেখালেখির সাথে যুক্ত থাকায় তিনি অনেক উৎসাহ যুগালেন। আমার পিতৃপরিচয়ের পাশাশাশি মাতৃকুলের পরিচয় পাওয়ার সাথে সাথে নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, তুই তো আমার ফুফাতো ভাই!! অনর্গল বলতে লাগলেন, আমার বড় মামা মুফতি জামাল উদ্দিন ইউছুফ খতিবী (রাহঃ) এর সাথে তাঁর শ্রদ্ধাভাজন পিতার ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্কের বর্ণনার পাশাপাশি আমার মামা-খালাদের সবার নামসহ এমনসব গল্প, যা ছোটকালে শুনতাম। পরিচয়ের পর থেকে ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত প্রায় বাইশ বৎসর আমরা মামাতো-ফুফাতো ভাইয়ের মতোই ছিলাম। প্রখর স্মরণশক্তি অধিকারী হুমায়ুন ভাইয়ের কাছে সাতকানিয়া লোহাগাড়াসহ চট্টগ্রামের সম্ভান্ত ও বনেদী পরিবার সমূহের বংশ তালিকার দীর্ঘ শাজরা ঠুটস্থ ছিল। এক নিঃশ্বাসে বড় বড় খান্দানী বংশের প্রজন্মের পর প্রজন্মের নামের তালিকা শুনে খোদ ঐ বংশীয় সদস্যদের বিস্ময়াভিভূত হতে দেখতাম। অভিভক্ত পাকিস্তানের শীর্ষ ধনী ২২ পরিবারের অন্যতম কর্ণধার এ.কে খান, সাবেক স্পীকার ফজলুল কাদের চৌধুরী, প্রখ্যাত পার্লামেন্টারিয়ান খান বাহাদুর বদি আহমদ চৌধুরী, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ব্যারিস্টার সুলতান আহমদ চৌধুরী, আওলাদে রাসুল (সাঃ) সাইয়েদ আবদুল আহাদ আল-মাদানী, মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আমিন (রাহঃ), বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরী’র মতো প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গের তথ্যবহুল জীবনী ও স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনের মধ্য দিয়ে মরহুম হেলাল হুমায়ুন চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যে অসাধারন অবদান রেখে গেছেন এবং গড়ে তোলেন উল্লেখিত মনীষীদের পরিবারের সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন।
শের-শায়েরীর (উর্দু কবিতা) সঙ্গে উপমহাদেশের মানুষ; বিশেষ করে কাব্যানুরাগীদের পরিচয় বহুকাল ধরে। উর্দু শে’র-শায়েরীতে হেকিম ইসমাঈল হিলালী (রাহঃ) ছিলেন সমসাময়িক বাঙালীদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। তাঁর রচিত ও পঠিত উর্দু কাব্য বিস্ময়াবিষ্ট করে তুলতো খোদ উর্দুভাষী সমসাময়িক শায়েরদের। উপস্থিত উর্দু শে’র রচনা এবং নিজের দরাজ গলায় তা পাঠ করে উপস্থিত দর্শকশ্রোতাদের করে তুলতেন বিস্ময়ান্বিত। ‘খঞ্জর দাওয়াখানা’ নামে আন্দরকিল্লায় একটি হেকিমী প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলেও উর্দু কাব্য চর্চা ছিল তাঁর জীবনের মহান ব্রত। ১৯৪৭’র দেশ বিভাগের পর বিপুল সংখ্যক ভারতীয় উর্দুভাষী মানুষ পূর্ব বাংলায় চলে আসে। বিশেষতঃ মুসলিম সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক অভিবাসী ভারতে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়। এরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, ঈশ্বরদী ও সৈয়দপুর বসবাস করতে থাকেন। এসব অভিবাসীদের মধ্যে স্বনামখ্যাত অনেক উর্দু কবিও ছিলেন। ১৯৭১ সালের পর এই অভিবাসীদের অধিকাংশই পাকিস্তানে চলে গেলেও উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশে থেকে যায়। ইসামাঈল হিলালী (রাহঃ) আমৃত্যু বাংলাদেশের উর্দু কবি-সাহিত্যিকদের অভিভাবক হিসেবে প্রতিভাত ছিলেন। তাঁর চলা-ফেরায় ছিল দিল্লী-লক্ষ্ণৌর আশরাফ মুসলমানের ন্যায় আভিজাত্যের লেবাস। তিনি তাঁর একমাত্র সন্তান হেলাল হুমায়ুনকে মাধ্যমিক লেভেল পর্যন্ত পড়িয়েছিলেন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল সংলগ্ন উর্দু মিডিয়ামের ইসলামিয়া স্কুলে, যা বর্তমানে উত্তর নালাপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত।
বাবার উর্দু কাব্যচর্চা গুণের আশ্চর্যজনক সমাহার ঘটেছিল ছেলে হেলাল হুমায়ুনের মাঝে। উর্দু কবিতার অন্যতম প্রাণপুরুষ বাবা ইসমাঈল হিলালীর আলোচনা ছিল বরাবরই তাঁর কাছে সুখপাঠ্য। হুমায়ুন ভাই এসএসসি মুসলিম হাই স্কুলে, ইন্টারমিডিয়েট মহসিন কলেজে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে অনার্স চট্টগ্রাম কলেজে এবং মাস্টার্স চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পন্ন করার পাশাপাশি স্ব-উদ্যোগে উর্দু কাব্য চর্চা চালিয়ে যান। শে’র-শায়েরীতে মশগুল বাবার বন্ধুদের সাথে গড়ে তোলেন হৃদ্যতা। উর্দু ভাষার বরেণ্য কবিদের মধ্যে আল্লামা ইকবাল, ওমর খৈয়াম, মির্জা গালিব, জালাল উদ্দিন রুমি, ফয়েজ আহমদ ফয়েজ, মীর তকী মীর, জিগর মুরাদাবাদী, হাফেজ জলান্ধরী, ইসমাইল মেরঠী প্রমুখের শের-শায়েরী সংকলিত গ্রন্থ হুমায়ুন ভাইয়ের বুক সেলফে সমসময় শোভা পেত। একজন সংস্কৃতিসেবী বা মননশীল মানুষ হিসেবেও তিনি সব্যসাচী ছিলেন। ১৯৯৪ সালের দিকে চট্টগ্রামের স্বনামধন্য বাংলা ও উর্দু ভাষার কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবি ও সাংবাদিকদের নিয়ে গড়ে উঠে বাংলা-উর্দু সোসাইটি। এই সোসাইটির তিনি আমৃত্যু সাধারন সম্পাদক ছিলেন। আল্লামা রুমি সোসাইটিরও তিনি আজীবন সদস্য ছিলেন। জাতীয় শুটার আতিকের বাবা এম. রহমান সাহেবের রহমতগঞ্জস্থ বাসভবনই হয়ে উঠে বাংলা-উর্দু সোসাইটির প্রধান কার্যালয়। বাঙালী-অবাঙালী কবি সাহিত্যিকদের উপস্থিতিতে আলোচনা সভা ছাড়া কয়েকমাস পরপর অনুষ্ঠিত হতো বাংলা-উর্দু কবিতা পাঠের আসর, সাথে হামদ, না’ত ও কাওয়ালী অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের প্রখ্যাত কবি আসাদ চৌধুরী, উর্দু কবিদের মধ্যে ঢাকার নৌশাদ নুরী, আহমদ ইলিয়াস, শামীম জামানবী প্রমুখ ছাড়াও চট্রগ্রাম, খুলনা ও সৈয়দপুরের খ্যাতনামা উর্দু কবিগণ তাদের কবিতা উপস্থাপন করতেন। অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে রাখতেন প্রফেসর ড.শাব্বির আহমদ, প্রফেসর ড. আনওয়ারুল হক খতিবীর মতো বহুভাষাবিদ ও বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী শিক্ষাবিদ এবং চৌধুরী গোলাম রব্বানীর মতো লব্ধ প্রতিষ্ঠিত কবি, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিকের সরব উপস্থিতি। উর্দু শে’র-শায়েরী, হামদ, না’ত ও কাওয়ালী আসরের উর্বর ভূমি হিসেবে সুপরিচিত চুনতির আলো-বাতাসে বেড়ে উঠার সুবাদে স্বাভাবিকভাবে আমাকেও গভীরভাবে আন্দোলিত করে এসব কিছু। আমিও জড়িয়ে পড়ি সোসাইটির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে। সঙ্গীত জগতের বড়ই সমঝদার ছিলেন হুমায়ুন ভাই। পেশাদার সাংবাদিক হয়েও বাংলা, উর্দু ও হিন্দি সঙ্গীতের প্রতিটি শাখায় তিনি সদর্পে বিচরণ করেছেন। শিল্পের সার্থকতার জন্য নাকি দুই ধরনের মানুষের প্রয়োজন; শিল্পী এবং রসজ্ঞ সমঝদার। সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও দেখা যাবে, সুরসিক শ্রোতা ছাড়া গায়কের/শিল্পীর সঙ্গীত পরিবেশন অনেকাংশেই অর্থহীন হয়ে পড়ে। শিল্পী ও শ্রোতার মেলবন্ধনের মধ্যে দিয়েই অর্থবহ হয়ে ওঠে সঙ্গীতানুষ্ঠান। বিষয়টির প্রমাণ পেয়েছিলাম উপমহাদেশের প্রখ্যাত কাওয়ালী শিল্পী মরহুম আবু কাওয়ালের ছেলে মরহুম সৈয়দ আমিনুল ইসলামের কাছে। ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝিতে এম.রহমান সাহেবের বাসভবনে আয়োজিত কাওয়ালী অনুষ্ঠানে হুমায়ুন ভাই আসতে দেরি হওয়ায় আমিন ভাই আমাকে ফিসফিস করে বলেছিলেন, হুমায়ুন ভাইয়ের মতো সমঝদার ব্যক্তি উপস্থিত না থাকলে কি নিজেকে মেলে ধরা যায়? উল্লেখ্য, প্রথিতযশা কাওয়াল মরহুম ছৈয়দ আমিনুল ইসলামকে চুনতির শাহ শাহেব হুজুরের নাতিন জামাই হিসেবে বাল্যকাল থেকেই দুলাভাই সম্বোধন করতাম।
পিতৃ ও মাতৃকুলের দিক দিয়ে অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন আলেম ও বুজর্গ পরিবারের গর্বিত উত্তরাধিকার মরহুম হেলাল হুমায়ুনের জীবনচরিতে ইসলামী জীবনাদর্শ গভীর রেখাপাত করে। ইসলামের মৌলিক বিষয়ের উপর তাঁর প্রচুর লেখাপড়া ছিল। আলেম-ওলামাদের কদর করতেন অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে। আলেম সমাজের মর্যাদা, সামাজিক প্রতিষ্ঠা, সাংগঠনিক ঐক্য, বাস্তবধর্মী মৌলিক চেতনার উন্মেষ- সবকিছুতে তিনি ভূমিকা রেখেছেন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। বায়তুশ শরফের সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন। বায়তুশ শরফের মরহুম পীর সাহেব বাহরুল উলুম আল্লামা শাহ মুহাম্মদ কুতুব উদ্দিন (রাহঃ) আত্মীয়তার সম্পর্কে তাঁর মামা ছিলেন। ১৯৯৮ সালের ২৫ মার্চ বায়তুশ শরফের প্রধান রূপকার আল্লামা শাহ মোহাম্মদ আবদুল জব্বার (রাহঃ) এর ইন্তেকালের সংবাদ দৈনিক পূর্বকোণের ল্যান্ড ফোনের মাধ্যমে তিনি আমাকে এভাবেই দিয়েছিলেন-” শাব্বির, আজ তো আমরা ইয়াতিম হয়ে গেলাম”। চট্টগ্রাম মহানগরীতে হুমায়ুন ভাইয়ের সবচেয়ে বড় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছিল বায়তুশ শরফেই।
মেহমান নেওয়াজি ছিল তাঁর অন্যতম চারিত্রিক ভূষণ। তাঁর অফিসে এসে কিছুনা কিছু আপ্যায়ন না করে গেছেন তাঁর প্রমাণ মেলা ভার। প্রখর মেধা, প্রবল স্মৃতিশক্তি, অপূর্ব বাগ্মিতা ও চমকপ্রদ তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে যে কোন জটিল বিষয়কে সহজ ও সরল ভাষায় উপস্থাপনের ক্ষেত্রে তাঁর যোগ্যতা ছিল বিস্ময়কর। বক্তব্য উপস্থাপনায় তিনি তাঁর নিজস্ব স্টাইল অনুসরণ করতেন। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে বক্তব্য উপস্থাপনে পারঙ্গম ছিলেন তিনি। মেধার সাথে যুক্তি ও সূক্ষ্ম বিচার শক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি সাধারণের মধ্যে অনন্যসাধারণ ব্যক্তিতে পরিণত হন। হুমায়ুন ভাইয়ের অন্যতম গুণ ছিল যেকোন পেশা ও শ্রেণীর মানুষকে খুব অল্পসময়ের মধ্যে আপন ও মোহাবিষ্ট করার দক্ষতা। সম্ভবত ২০০৬ সালের ঘটনা। পাকিস্তানের নৌ বাহিনী প্রধান চট্টগ্রাম সফরে আসলে পতেঙ্গা বোট ক্লাবে রিসিপশন অনুষ্ঠানে সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে হুমায়ুন ভাইও আমন্ত্রিত হন। পাক নৌবাহিনী প্রধানের সাথে হাত মেলানোর সময় তিনি কবি গালিবের বিখ্যাত কবিতার দু’টি চরণ- ‘চামান হাস পাড়ে, গুল মুসকুরায়ে, বড়া শুকরিয়া আপ তাশরিফ তো লায়ে।’ (সারা বাগান হেসে উঠেছে, ফুলেরাও মুচকি হাসছে, অনেক ধন্যবাদ, এখানে আপনার আগমন যে হয়েছে) পাঠ করার সাথে সাথেই তিনি থমকে দাঁড়ান এবং হুমায়ুন ভাইয়ের ভিজিটিং কার্ড চেয়ে নেন, আর সেই রাতেই হোটেল আগ্রাবাদে পাক নৌ বাহিনী প্রধানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের আমন্ত্রণ! ২০০৩ সালে আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশন নির্মিত মসজিদ উদ্বোধন করতে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া লোহাগাড়া আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর সফরসঙ্গী হিসেবে তিনদিনের সফরে সিলেটের কানাইঘাটে গিয়েছিলাম। সাথে ছিল বন্ধুবর অধ্যাপক ড.হোছামুদ্দিনও। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় অনেক গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ। হুমায়ুন ভাই তাঁর বক্তৃতায় সিলেটের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি চট্টগ্রামের সাথে সিলেটবাসীর ঐতিহ্যগত ও ভাবাদর্শগত সাদৃশ্যতার তথ্যপূর্ণ বক্তব্য অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় তুলে ধরার মাধ্যমে উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের করে তুলেছিলেন বিমোহিত-বিমুগ্ধ।
মেধা, মনন, কর্মপ্রয়াস, শ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা অর্জনের মধ্য দিয়ে হুমায়ুন ভাই নিজেকে তিলেতিলে গড়েছিলেন পরিশীলিত ও পরিচ্ছন্ন একজন আপাদমস্ত সমাজহিতৈষী মানুষ হিসেবে। জাতি, ধর্ম, দেশ ও সমাজের জন্য তিনি জীবনভর কর্তব্য সম্পাদন করেছেন। অবদান রেখেছেন নানা অঙ্গনে, নানাভাবে। পেশাদার সাংবাদিক হয়েও জীবনের সুদীর্ঘ সময়ে একজন সমাজসেবী হিসেবে এলাকায় একটি ডিগ্রী কলেজ, একটি মাদ্রাসা, একটি স্কুল, এলাকার রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভাটসহ বিদ্যুতায়নে অপরিসীম দক্ষতার পরিচয় দিয়ে গোটা সাতকানিয়ায় রীতিমতো ঝড় তুলেন। বিশাল এলাকাজুড়ে আল হেলাল ডিগ্রী কলেজসহ স্কুল ও মাদ্রাসা তিনি নিজ পৈত্রিক জায়গাতেই একক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর চিন্তাজগতের বিশাল অংশজুড়ে ছিল আল হেলাল ডিগ্রী কলেজ। শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে থাকা দক্ষিণ-পশ্চিম সাতকানিয়ার চরতি ইউনিয়নে যখন কলেজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর তখন অধিকাংশ সমাজসচেতন ব্যক্তিবর্গের কাছে এটি একটি দুরূহ ব্যাপার ছিল। তিনি একাধিকবার বলেছিলেন, “আমি যখনই আমার চরতি এলাকায় একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ের কথা ব্যক্ত করেছি খুব কম লোকের কাছেই সাড়া পেয়েছি। অনেকে আড়ালে-আবডালে নানা তীর্যক বাক্যও ছুড়ে মেরেছে”। সাংবাদিক হেলাল হুমায়ুনের চিন্তার ভূবন ছিল অনেক বিশাল ও বিস্তৃত এবং সুদূরপ্রসারী। তাঁকে আমি একবার প্রশ্ন করেছিলাম, আপনি কোন শিল্পপতি- জমিদার না হয়েও নিজের জায়গার উপর অজপাড়া গাঁয়ে কলেজ প্রতিষ্ঠার মতো দুরূহ কাজে হাত দেবার সাহস করলেন কেমনে? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “যেকোন দেশের, জেলা- উপজেলার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা বরাবরই অবহেলিত থাকে। সাতকানিয়া-বাশঁখালী-আনোয়ারা এই তিন উপজেলার মিলনস্থলের কাছাকাছি অবস্থিত চরতি তালগাঁও গ্রাম। আমার মনে হলো, এ গ্রামের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া পাহাড়ের চুঁড়ায় মনোরম পরিবেশে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে তিন উপজেলার শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। সুতরাং সেই চিন্তা থেকে অত্র এলাকায় বাবার নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা নিয়ে আমার সাধনা”। বলার অপেক্ষা রাখেনা, সময়ের ব্যবধানে আল হেলাল ডিগ্রী কলেজ সাতকানিয়া-বাশঁখালী-আনোয়ারা এই তিন উপজেলার শিক্ষার্থীদের অন্যতম সেরা উচ্চ বিদ্যাপীঠ।
মরহুম হেলাল হুমায়ুন একজন সৎ, নীতিবান, ন্যায়পরায়ণ, আদর্শনিষ্ঠ ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন সাংবাদিক ছিলেন। অনেকেই তাঁকে ‘সাংবাদিকদের শিক্ষক’ হিসেবে অভিহিত করেন। তাঁর হাতে গড়া অনেক সাংবাদিক এখন দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় নিজ নিজ দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। তাঁর বদান্যতায় অনেক দরিদ্র পরিবারের ছেলে উচ্চ শিক্ষা এবং চাকরির সুযোগ লাভ করে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী কিংবা এলাকার বিপন্ন মানুষের বিপদাপদে তিনি ছুটে গিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। তাঁর মাঝে অসাধারন নেতৃত্ব গুণ, অসামান্য সাংগঠনিক দক্ষতা থাকা সত্বেও তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতি এবং নির্বাচন থেকে সমান দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন। তবে প্রায় প্রতিটি স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে বুদ্ধি পরামর্শের জন্য তাঁর ডাক পড়তো এবং নেপথ্যে মূখ্য পালন করতেন। এলাকায় নেতৃত্ব সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখলেও নিজে সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়ার পক্ষে ছিলেননা। এ প্রসঙ্গে ১৯৯৬ কিংবা ‘৯৭ সালের দিকে একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। ঐ সময় আমি দৈনিক পূর্বকোণের পাশাপাশি হুমায়ুন ভাইয়ের অফিস সংলগ্ন ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় (মাদানী মঞ্জিল) থেকে প্রকাশিত মাসিক সাম্পানের সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করতাম। একদিন বিকেলে হুমায়ুন ভাই তাঁর অফিসে ডেকে নিয়ে চরতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তাঁর ওয়ার্ডের মেম্বার পদপ্রার্থী হিসেবে পেশায় হোমিও চিকিৎসক রেজাউল করিম নামে সাদাসিধে এক যুবকের সাথে পরিচয় করে দিয়ে বললেন, ছেলেটি অত্যন্ত সৎ ও ন্যায় পরায়ন এবং আমার অত্যন্ত প্রিয়ভাজন। একটি পাঁচশত টাকার নোট বের করে একদিনের মধ্যে তিনশত পিচ পোস্টার ছাপার দায়িত্ব দিলেন আমাকে। প্রিন্টিং সহজলভ্যতার ঐ সময়ে চারশত টাকা দিয়ে তিনশত পোস্টার ছাপা সম্ভব হয়। নির্বাচনে তিনি সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে মেম্বার নির্বাচিত হন এবং পরবর্তী নির্বাচনে চরতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান; একবার নয়, পরপর তিনবার। এই হচ্ছেন নেতৃত্ব সৃষ্টির কারিগর হুমায়ুন ভাই! আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর রাখতেন সবসময়। শত ব্যস্ততার মাঝেও বিয়ে-শাদী, আচার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করতেন। ২০০১ সালের ২১ মে আমার আম্মার আকস্মিক ইন্তেকালের সংবাদ মোবাইল নেটওয়ার্কের দুষ্প্রাপ্যতার যুগে সকল শুভাকাঙ্খীদের দেয়া সম্ভব হয়নি। হুমায়ুন ভাই খবর পেয়ে ২৩ মে আমার গ্রামের বাড়ি গারাংগিয়াতে হঠাৎ উপস্থিত। আম্মার জেয়ারত শেষ করে বাড়িতে এসে একটা এনভেলাপ আমার স্ত্রীর হাতে দিয়ে মিনিট বিশেক পর বিদায় নেন। আমি জেয়াফতের জন্য গরু কিনতে তখন পদুয়া তেওয়ারীহাটে ছিলাম। এসে দেখি ‘ফুফুর জেয়াফত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন’ লিখা একটি এনভেলাপ।
৩০ অক্টোবর ২০১৬ ইং আজীবন সরব মানুষটির হঠাৎ নীরব যাত্রার খবরটি যখন পাই- তখন কি পরিমাণ কষ্ট লেগেছিল তা বলাই বাহুল্য। মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই ছুটে গিয়েছিলাম ন্যাশনাল হাসপাতালে। ১৯৯৪ সালে পরিচয়ের দিন তাঁর অফিস থেকে চলে আসার সময় তিনি হাতে হাত রেখে উর্দু কবিতার যে দু’টি শ্লোক পড়ে বিদায় দিয়েছিলেন তা বারবার মনে পড়ছিল এসময়- ‘ইয়ে আরজু হ্যায় ওয়াফা বানকে তেরে সাথ রাহু, ধারাক্তে দিলকি সাদা বানকে তেরে সাথ রাহু।’ (এটাই আমার আশা, যাতে বিশ্বাসী হয়ে তোমার সঙ্গে থাকি, হৃদয়ের স্পন্দন হয়ে সবসময় তোমার সঙ্গে থাকি)। সবসময় চেষ্টা করেছি হুমায়ুন ভাইয়ের পাশে থাকার। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোশগল্প ছাড়াও চলার পথে কাছের কারো আচার-আচরণে দুঃখ পেলে আমাকে অফিসে ডেকে নিয়ে দুঃখ শেয়ার করে মনকে হালকা করার চেষ্টা করতেন। ইন্তেকালের মাস দু’য়েক পূর্বে দৈনিক নয়াদিগন্তের চট্টগ্রামের ব্যুরো অফিসে ডেকে নিয়ে এমন একটি দুঃখের বর্ণনা দিতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। মনে খুব কষ্ট পাই এই ভেবে, যে মানুষটা কারো অনিষ্ট বা ক্ষতি করার কথা ভাবেননি কোনদিন, কতো কষ্ট পেয়েই না তিনি শেষ জীবনটা কাটিয়ে গেলেন। কষ্টটা ছিল মানসিক। দুরারোগ্য রোগ যখন ঘুণোপোকার মতো ভিতর থেকে মানুষের শরীর খেয়ে ফেলে তিলেতিলে, তখন তার যন্ত্রণা যে কত তীব্র ও অসহনীয় হয়ে উঠে, তা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারেন না। কিন্তু হুমায়ুন ভাই জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত মুখের হাসিটি ধরে রেখেছিলেন অমলিন। তবে মানসিক কষ্টটা হাসির আড়ালে লুকোতে চাইলেও চাপা থাকতোনা পরিবারসহ আপনজনদের কাছে। হুমায়ুন ভাই ছিলেন ঘোর সংসারী। নিজেই বাজার করতেন। স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদেরকে তিনি প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। অমন স্নেহপ্রবণ পিতৃহৃদয়ের পরিচয় দেখে বিমোহিত হতাম বারবার।
আল্লাহ পাক, অত্যন্ত পরোপকারী সমাজহিতৈষী অসাধারন ভালো মানুষটিকে জান্নাতের স্থায়ী মেহমান হিসেবে কবুল করুন-আমিন।
লেখক:কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক